খাস খবর বাংলাদেশঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দলের জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রমে তোড়জোড় শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগে। ইতোমধ্য দলটির বিভাগীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা আটঘাট বেঁধে নেমে পড়েছেন তৃণমূলের সফরে। তাঁরা আঁটকে থাকা নগর- মহানগর, জেলা-উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মেলন সম্পূর্ণ ও সফল করতেও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
করোনা ভাইরাসের প্রভাব থাকায় এর আগে ক্ষমতাসীন দলটির নগর-মহানগর, জেলা-উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে, ভাইরাসটির সংক্রমণ বৃদ্ধি কমে আসায় এসব তৃণমূলে আবারও-দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছে আওয়ামী লীগ।
একই ভাবে, তৃণমূলের সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়িয়েছে দলটির গুরুত্বপূর্ণ শাখা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি কমে আসায় থানা,ওয়ার্ড ও ইউনিটে টিম ওয়ার্ক সফরের মাধ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রমের গতি বৃদ্ধি করছে-এ দুই নগর আওয়ামী লীগ। থেমে থাকা সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি প্রক্রিয়া এবং তৃণমূলে সম্মেলন সম্পূর্ণ করতে-এরমধ্যে টিম গঠন করেছে ওই দুই নগর আওয়ামী লীগ। এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দফতর সূত্র।
উত্তর আওয়ামী লীগের দফতর সূত্র জানিয়েছেন, গোপনে আর কমিটি গঠনের সুযোগ থাকছে না। তাদের প্রতিটা ইউনিট সম্মেলনে ব্যাপক প্রচারণা থাকছে। নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুনে সাজানো থাকবে সম্মেলন ভেন্যু এবং আশপাশের স্থান। এর সাথে ঢাক, ঢোল পিটিয়ে সম্মেলনের কথা আগেই জানান দেওয়া হবে মানুষদের। তাঁরা জানবে ওমুক এলাকায় ইউনিট কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
এদিকে, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ তাদের অধীনে ২৬টি থানার সদস্য সংগ্রহ, নবায়ন প্রক্রিয়া ও ইউনিট কমিটি সম্পূর্ণ করার জন্য নগর নেতাদের সমন্বয়ে ২৬টি টিম গঠন করেছে। এ ২৬টিমের দুই থেকে পাঁচ জন পর্যন্ত টিম মেম্বার রয়েছে। মূলত এরা টিম গঠন ও সম্মেলনের নেতৃত্ব দিবে। দফতর সূত্র আরও জানান, তাঁরা আগামী মাসের ২০ তারিখের মধ্যে তাদের ইউনিট কমিটি সম্মেলন কার্যক্রম সম্পূর্ণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এর পরই শুরু করবে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠনে সম্মেলনের কাজ। তবে, ওই নগর আওয়ামী লীগ এই গঠন প্রক্রিয়ার আগে ৩-৪ লক্ষ সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন সম্পূর্ণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে ১ লক্ষ সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন করেছে বলে সূত্র জানিয়েছেন।
১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সংগঠনকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ইউনিট কমিটি গঠন কল্পে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।
ওই নগর আওয়ামী লীগের দফতর প্রলয় সমদ্দার বাপ্পি জানিয়েছেন, তাদের বৈঠকে যে-সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তা-হলো, (ক) প্রতিটি ইউনিটে ন্যূনতম ১৫০ জন প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ করতে হবে। (খ) গঠনতন্ত্র মোতাবেক ৩৭ জন সদস্য নিয়ে ইউনিট কমিটি গঠিত হবে। (গ) ইউনিট কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নগরের নেতারা এবং সংশি¬ষ্ট ওয়ার্ড/ ইউনিয়ন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং নবায়নের নেতৃত্ব দেবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নগর নেতাদের পরামর্শে ও সম্মতি সাপেক্ষে সংশি¬ষ্ট ওয়ার্ড ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ইউনিট কমিটি ঘোষণা দিবেন। (ঘ) দায়িত্বপ্রাপ্ত নগর নেতারা ইউনিট কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় সংশি¬ষ্ট সংসদ সদস্যের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। (ঙ) দায়িত্বপ্রাপ্ত নগর নেতারা ইউনিট কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় সংশি¬ষ্ট থানা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন, ইত্যাদি।
জানতে চাইলে প্রলয় সমদ্দার বাপ্পি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ড পিছিয়ে পড়েছিল। এখান থেকে উত্তরণে এবং কাভার করার জন্য আমাদের নগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বদ্ধপরিকর। এবং সে-ভাবেই আমরা মাঠে আছি। করোনার সময় গত আগস্ট মাসে ত্রিশ দিনে প্রায় ৩৭ বার খাদ্য সামগ্রী উপহার প্রদান অনুষ্ঠান করেছি। একটা পরিবারকে ৬-১০ দিনের খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করেছি। যারফলে আগস্টের এক মাসে জনগণের সাথে আমাদের হƒদ্যতা ও গ্রহনযোগ্যতা অনেক অংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা একটু জান দিয়ে সার্ভাই করে দিয়েছি। যাতে আগামীতে সম্মেলন প্রক্রিয়াতেও তৃণমূলের মানুষ সম্পৃক্ত হতে পারেন।
সদস্য সংগ্রহ, নবায়ন প্রক্রিয়া ও ইউনিট কমিটি সম্পূর্ণ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ৩-৪ লক্ষ সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন সম্পূর্ণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে ১ লক্ষ সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন করাও হয়েছে। আমাদের প্রতিটি থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে এরমধ্যে কর্মী সম্মেলন প্রক্রিয়া কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ সম্মেলনের পরেই করা হবে ইউনিট সম্মেলন।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রলয় সমদ্দার বাপ্পি বলেন, আমাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পরিকল্পনা। তাঁরা আগামী জানুয়ারি মধ্যে টোটাল ইউনিট,ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা কমিটির সম্পূর্ণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গোপনে কমিটি সই করে দিলাম। পকেট কমেটি করলাম, এটা আর হবে না। মানুষকে জানাতে হবে এলাকায় ইউনিট কমিটি হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হচ্ছে। সদস্য সংগ্রহ ওপেন হবে। মাইকে ঘোষণা দেওয়া হবে আগামী ওমুক তারিখ আওয়ামী লীগের সদস্য পদ প্রদান ও নবায়ন করা হবে। এবার ইউনিট কাউন্সিল গুলো হবে পুরো একদম খোলা-মেলা এবং উদ্বুদ্ধ করার মধ্যে দিয়ে। কারণ ইউনিট যদি শক্তিশালী না হয়, তাহলে ওয়ার্ড, থানা কমিটিতে তেমন কর্মকান্ড লক্ষ করা যায় না। আমরা এবার মানুষকে উজ্জীবিত করে। এবং জানান দিয়ে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া চালাবো।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম অনেক দুরে এগিয়ে ছিলো। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রভাবের কারণে কার্যক্রমটি স্থাগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি কমে আসায় আমরা নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মিটিং করে আবারও কার্যক্রম শুরু করছি।
নিজ দায়িত্ব প্রাপ্ত মোহাম্মদপুর এলাকার কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে ৫ টি ওয়ার্ড এবং ৬৮ টি ইউনিট। আগে তাঁরা ৬৮টি ইউনিট কমিটি করেছে। অলরেডি ৫ টা কর্মী সভা করেছি। সদস্য সংগ্রহ, নবায়ন কার্যক্রম প্রথম যখন ঘোষণা দিয়েছি পরের দিনই চালু করেছি। কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া ওপেন মঞ্চে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে করে কোন বিতর্কিত না হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে রানা বলেন, কর্মী সভাতে আমরা ইউনিট সম্মেলনের তালিখ দিয়ে রাখবো। ইতোমধ্যে সম্মেলনের রুপরেখা তৈরী করেছি। যেগুলোতে আমাদের ১৫০ জন সদস্য হয়ে গেছে সেগুলোতে আগামী মাস থেকে আশাকরি সম্মেলনের দিকে ধাবিত হতে পারবো।
এবিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমরা যে ইউনিট কমিটি করবো ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ইতিহাসে এই সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে ইউনিট কমিটি নগরের সুপারভিশন/ নগরের নেতৃত্বে করছি। এখন কর্মী সভা কর ও সদস্য সংগ্রহ এবং নবায়ন করা হচ্ছে। এরপর আমরা সম্মেলন করবো। সম্মেলনের মাধ্যমেই কমিটি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, আমরা ওপেন রাখবো কে সভাপতি কে সাধারণ সম্পাদক হতে চান হাত তোলেন। এরমধ্যে সার্ভে কমিটি বসবে। কাকে সভাপতি ও কে সাধারণ সম্পাদক করা যায়- করবে। এখানে আমরা ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণকে গুরুত্ব দেবো। কারণ ওয়ার্ডের নেতৃত্ব দেন তাঁরাই। বজলুর রহমান আরও বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ইউনিট কমিটি রয়ে গেছে। এটা অকার্যকর। এখন আমরা বেঁচে বেঁচে ইউনিটের নেতা নির্বাচিত করবো।