সাহিদুল এনাম পল্লব:
ঝিনাইদহ জেলা বিএডিসির দুর্নীতির খেসারত দিতে হচ্ছে কৃষকের চোখের কান্নার পানি শত শত বিঘা বোর ধানের জমি সেচের পানির অভাবে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। বোর মৌসুমে ধান উৎপাদন অ-নিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। এত টাকা পয়সা খচর করে যদি ধান উৎপাদন না হয় তাহলে সারা বছর কি খেয়ে বেঁচে থাকবে?
ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ঈশ্বরবা মাঠে। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ঝিনাইদহ জেলা বিএডিসি সেচ বিভাগের আওতায় ” বৃহত্তর খুলনা ও যশোর জেলা খুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের অধিনে ঝিনাইদহ জেলা কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন ঈশ্বরবা মৌজায় ২ কিউসেক সেচ স্কীমে ১২০০মি ভূগর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণ প্রকল্প টি ৮ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা ব্যায়ে সমাপ্ত করা হয়। প্রকল্পটির নির্মাণ করেন মেসার্স রাতুল এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়েছে টোবা পাইপ ২৫০ এম এম টিক ৩.৯ এম এম।
এই প্রকল্পের অধীনে ২শত বিঘার অধিক জমি। এই জমি গুলিতে আগে আখের চাষ হতো। কিছু কিছু জমিতে স্যালো ইঞ্জিন এর সাহায্যে বোর মৌসুমে বোরো ধানের চাষ হতো। এ বছর সেচ প্রকল্প নির্মাণ করার কারনে কৃষক আশায় বুক বাধে যে এবার থেকে তারা মাঠে বোর ধানের চাষ করবে। সেচ প্রকল্প চালু হলে কৃষক জমি প্রস্তুত করে রোর ধান রোপণ করে কিছু কিছু জমি রোর ধানের পানির আশায় ফেলে রাখলের পরে সেখানে পানি না পাওয়ায় সে জমি গুলি পতিত পড়ে আছে। যারা চাষ করেনি তা একরকম কিন্ত যারা প্রথমে পানি পেয়ে বোর ধান চাষ করেছিল তাদের বিধি বাম। প্রায় ১৫০ জন কৃষকের পানির বোর ধানের জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আগে এই মাঠে যে স্যালো ইঞ্জিনের সেচযন্ত্র ছিল তাতে এখন ঠিক মত পানি উঠছে না। যার ফলে ২ শত বিঘা জমির বোরো চাষে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভবনা হয়ে উঠেছে।
কাশীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের জানায় গত বছর এই জমিতে সে ৩০ মন ধান পেয়েছিল এই বছর পানির কারনে ১০ মন ধান ও পাবে না। তার দেড় জমিতে ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই প্রকল্পে পাইপ বসানর সময়ে তারা কোন বালু ব্যবহার করেনি। তাছাড়া এই পাইপ মাটির চাপ নিতে পারছে না। এমনিতে মাটির চাপে এই পাইপ বসে গেছে।
কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলার মোসারেফ হোসেন বলেন যে আমাদের এই মাঠে আগে আখের চাষ হতো। বিএডিসির এই নলকূপ স্থাপনের কারনে আমাদের ধানের চাষে উদ্বুদ্ধ করে যার কারনে আমরা ধান চাষ করি। এই প্রকল্পে মাটির নিচে দিয়ে যে পাইপ দিয়েছে তা কুমা পাইপ দিয়েছে যার কারনে এই পাইপ দিয়ে পানি যাচ্ছে না। আমাদের শত শত বিঘার জমির ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন আমরা এর ক্ষতি পুরন চাই। আগে আমাদের মাঠে আখের চাষে আমরা অনেক লাভবান হতাম। এখন মাঠের শত শত চাষি এখন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। মাঠে পানি পাচ্ছে না মাঠের মাটি ফেটে গেছে। যদি আমরা ক্ষতি পুরন না পাই তাহলে আমরা কি করে বাঁচব?
ঈশ্বরবা মাঠে বিএডিসি সেচ প্রকল্পের সভাপতি আয়নাল হক বলেন যে এখানে বিএডিসি সেচ প্রকল্প স্থানের ফলে সকলে আখবাদে ধান চাষ করি। তবে এই প্রকল্পে বিএডিসি হয়ত নিন্ম মানের পাইপ দিয়েছে যার কারনে পাইপ ফেটে যাচ্ছে আমরা পানি পাচ্ছি না। তাতে আমাদের শত শত বিঘা জমির শত শত চাষি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। বিএডিসির উনারা এসে কি করবেন তা আমরা জানি না তবে আমরা সকলে তাদের নিকট ক্ষতি পুরন চাই। পাশে কোটচাঁদপুরে বিএডিসি এই প্রকল্পে মজবুত পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে। সে পাইপ ফাটছে না।
ঈশ্বরবা বিএডিসি সেচ প্রকল্পের ম্যনেজার আব্দুল কাদের বলেন যে আমরা নিজেদের টাকা খরচ করে ঘর নির্মাণ করেছি। তারা শুধু মাটির নিচে দিয়ে পাইপ লাইন বসান ও পল্লী বিদ্যুতের লাইন লাগিয়ে দিয়েছে। এখন সেই পাইপ লাইন কয়েক দিনেই ফেটে গেছে।
এই প্রসঙ্গে মেসার্স রাতুল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মামুন বলেন যে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।কাজ শেষে প্রকল্প চেক করে দেওয়ার কথা কিন্ত তখন বিদ্যুৎনা থাকায় আমরা চেক করে দিতে পারি নাই।প্রকল্প কাজে সিডিউলের নির্ধারিত পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে। দুই জাইগার পাইপ নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষক জমিতে ধান রোপণ করেছে যার কারনে পুনরায় মাটি খুড়ে পাইপ লাগাতে পারছি না। তারা কাজ করতে দিচ্ছে না।
এই প্রকল্পের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা ঝিনাইদহ বিএডিসির প্রকৌশলী শাহাজালাল আবেদিনের সাথে মোবাইলে কথা বললে সে বলে যে আমি গাড়ির মধ্যে আছি পরে আপনাকে ফোন করব। তবে পরে সে আর কোন ফোন করেনি।