রবিউল আলমঃ ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডে তালিকা ১৫, ২১ আগস্ট ও জেল হত্যা। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে আমি কখনো সামনা সামনী দেখি নাই, কথাও বলি নাই। তাদের রাজনৈতিক ইতিহাস ও আত্নত্যাগ আমাকে, আমার হৃদয়কে ছুয়ে যায়। তাজউদ্দীন আহমদকে প্রতিদিন, প্রতি সপ্তায়, প্রতি মাসে হলেও একবার দেখা হতো। বাকী ছিলো স্বাধীনতার ৯ মাস। মন্ত্রী হওয়ার পরেও রায়ের বাজার, মধু বাজার, ধানমণ্ডি বাসীর চোখ এড়িয়ে চলতে পারেন নাই।
১৯৬৪/১৯৬৫ সালে একমাত্র রায়ের বাজারই ছিলো নিত্যপন্যের প্রয়োজন মিটানো একমাত্র বাজার। ১৯৬৮ সালেও তাজউদ্দীন সাহেবকে বাজার করতে দেখেছি। বাপ দাদার দোকান থাকায়, কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। এত সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন। গরিব বলে, ছোট বলে কখনো অবহেলা দেখি নাই তার মাঝে। আজকের মত এমন করে সেদিন ভাবতে ও বুঝতে শিখিনাই বলেই অনেক কথা মনে রাখা হয় নাই।
ধানমন্ডি আজকের আবাহনী ক্লাব মাঠ ছিলো আমাদের খেলাধুলার একমাত্র স্থান। মাঠে পাশে তাজউদ্দীন আহমদের বাড়ী। বাড়ীতে আম গাছে উপর ছিলো নিশানা। খেলাঘর ছলে ঐক্যবদ্ধ আম চোরের কিশোর গ্যাং বলতে পারেন। ধানমন্ডির এমন কোনো বাড়ী ছিলোনা, আমাদের আক্রমন থেকে রহ্মা পেয়েছে।
তাজউদ্দীন সাহেবের আমগাছে চাকা দিয়ে গাড়ীর গ্লাস ভেঙে ফেললাম। তিন চারজনে দৌড়িয়ে আমাদেরকে ধরে আম গাছের সাথে বেধে রাখা হলো। তাজউদ্দীন সাহেব আমাকে দেখেই তারাতারী বাধন খুলে দিয়ে, পাড়া আম নিয়ে চলে যেতে বললেন মাথায় হাত দিয়ে। সেদিন থেকে আর আমগাছে চাকা মারা হয় নাই।
আমি একজন তাজউদ্দীন ভক্ত হয়ে গেলাম। ৩ নভেম্বরের গল্প, ইতিহাস অনেকেরই জানা, লেখবেন, তবে তাজউদ্দীন আহমদের জানাযায় আমরা কিছু লোক ছিলাম। জেলখানায় ৪ নেতাকে হত্যার খবর পেয়ে সাধারন মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। ১৫ আগস্টের আতঙ্ক তখনো মানুষের মন থেকে মুছতে পারনে নাই, তার উপর জেল হত্যা। রাস্তায় সেনাবাহিনীর গাড়ী। বাধাহীন নয় সাধারনে চলাচল। কি হচ্ছে কৌতুহল নিয়েই তাজউদ্দীন সাহেবের বাড়ীতে বার বার হাজির হচ্ছিলাম। মাঝে মাঝে পুলিশের গাড়ী, সেনাবাহিনীর গাড়ী দেখলেই কিছুটা পলায়নের মত করে সরে পরতাম। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও লাশ দেখতে না পেয়ে বাড়ী চলে আসি। ঘুম আসছে না। রাত্রী নিঝুম, বাংলার আকাশ বাতাশ স্থাতব্দ হয়ে আছে। তবু ঘুম না আসার কারণ খুজে পাচ্ছিলাম না। ভোর হতেই নিজের অজান্ত মধু বাজার হয়ে ধানমণ্ডি। আমার আগেই অনেক মানুষ তাজউদ্দীন আহমদের লাশে পাশে।কিছুটা কষ্ট করেই একনজর দেখার জন্যের ব্যাকুলতা লিখে বুঝানো যাবে না।স্যারে মুখটা দেখেই মনে মাঝে লুকানো ব্যার্থা অনুভব করলাম। এই মানুষটা আমার মাথায় হাত দিয়েছিলো,
বাঙালির হাজার বছরের আকাংখা স্বাধীন একটি মানচিত্র উপহার দেওয়ার জন্য পরাধীন শ্রত্রু বাহিনীর সকল পরিকল্পনা ভুণ্ডুল করে দিয়েছিল।জাতির জনকের একটি ইশারায় ঝাপিয়ে পড়েছিলো মুক্তির সংগ্রামে। আজ জীবন দিয়ে প্রমান করে গেলে রাজনীতি শুধু ভোগের নয়।
পুলিশের হুশাল, সেনাবাহিনীর গাড়ীর উপস্থিতিতে চেতন ফিরে আসায় সবার সাথে রাস্তার উল্ট পারে অবস্থান নিলাম। লাশ নিয়ে টানাটানি পরে জানাযার নামাজের জন্য ডাকাডাকি। আমরা যে কজন উপস্থিত ছিলাম, তারাই অংশগ্রহণ করি। বিচার হয়েছে, এখনো মনের আগুন নিভাতে পারিনি।
জেলহত্যা ১৫ ও ২১ আগস্টের হত্যাকারীদের ফাসীতে ঝুলানো জন্য, আমাদের হায়াৎ এ কুলাবেনা জানি। আমি বিশ্বাস করি বাঙালি জাতি কোনদিন ওদেরকে হ্মমা করবে না।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামলী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।