মোঃ ইব্রাহিম হোসেনঃ সংবিধান সংস্কারে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে অন্তত ১৯টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, আমাদের প্রস্তাবগুলোর লক্ষ্য হলো, সংসদকে প্রধানমন্ত্রীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করার জন্য ব্যবস্থার সুপারিশ করা। তিনি বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছি। এটি আমরা রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য করেছি। আমাদের উদ্দেশ্য, একজন ব্যক্তি, প্রধানমন্ত্রী সব রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার একক কর্তৃত্ব নিয়ে কর্তৃত্ববাদী বা স্বৈরাচারী হয়ে না ওঠেন, সেটি নিশ্চিত করা।’
আজ ২৮ নভেম্বর ২০২৪ রোজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরে জিএম কাদের এসব কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালুর প্রথম থেকেই সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধির খসড়া সেভাবেই তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু, সেক্ষেত্রেও প্রথম থেকেই প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের প্রধান নির্বাহীকে সংসদের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। সংবিধানে একটি অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে এটি করা হয়েছে (অনুচ্ছেদ-৭০)।’ ‘এই বিধানটি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত দলীয় সংসদ সদস্যদের (যারা সংসদ সদস্য বা এমপি নামে পরিচিত), সংসদে ভোটদানের সময় দলের সিদ্ধান্তের বাইরে বা যাকে সংসদের ভাষায় দলীয় হুইপিং বলা হয়, তার বাইরে ভোট দানের অধিকার দেয় না। এটি প্রধানমন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় দলের সংসদ সদস্যদের সমর্থন নিশ্চিত করে। সংসদে সংসদ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সরকার গঠিত হয়।’
তিনি উল্লেখ করেন, সংসদের সব সিদ্ধান্ত সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয় । শুধুমাত্র সংবিধানের সংশোধনী যার জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়। সুতরাং, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ প্রধানমন্ত্রীকে একতরফাভাবে যেকোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের এবং সংসদে তা পাস করানোর ক্ষমতা দেয়। ‘সরকারি দলের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী যদি দুজন ভিন্ন ব্যক্তি হতেন— তাহলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সংসদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে কিছুটা হলেও ভারসাম্য থাকতে পারতো। ঐতিহ্যগতভাবে, এটি কখনও ঘটেনি। এখন পর্যন্ত যখনই সুযোগ আসে, দলীয় প্রধানই প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন।’
জাপার চেয়ারম্যান বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা বিচার বিভাগ থেকে না হওয়াই ভালো। কারণ, এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। তাছাড়া, এর মাধ্যমে রাজনীতি ও নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের একটি মিশ্রণের অনাকাঙ্ক্ষিত উদাহরণ সৃষ্টি হতে পারে।’ সংসদে তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচিত হয়ে প্রস্তাবিত রাষ্ট্রপতি, সর্বসম্মত প্রার্থী বিবেচিত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব দিতে পারেন। ১৫তম সংশোধনী বাতিল করার পরে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮। (খ)-তে, সে অনুযায়ী পরিবর্তন আনা যেতে পারে। ‘পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করা হলে ৭(ক) অনুচ্ছেদটি বাদ হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ৭(ক) যুক্তিসঙ্গত বলে বিবেচিত হয় না। সংবিধানের ৭(খ) অনুচ্ছেদটিও বাতিল হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কো- চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আখতার, আলমগীর সিকদার লোটন, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, শেরীফা কাদের, মনিরুল ইসলাম মিলন, মাসরুর মওলা, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, আরিফুর রহমান খান, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা নুরুল ইসলাম তালুকদার, খলিলুর রহমান খলিল, জাহিদ হাসান, মেজর মাহফুজুর রহমান (অব.), ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব সামছুল হক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হুমায়ুন কবির, ওলিউল্লাহ মাসুদ চৌধুরী, কাজী আবুল খায়ের, এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, আব্দুল হান্নান, এমএ রাজ্জাক খান, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক মামুনুর রহিম সুমন, প্রিন্সিপাল গোলাম মোস্তফা, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক।