কোটা প্রথা বা পদ্ধতি বিশ্বে নতুন না। পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীকে মুল শ্রতোধারার সাথে সামিল করার জন্যই কোটা পদ্ধতির চালু। বৃটিশরা বিশ্ব শাসন করেছে, তারা যখন দেখলো নেটিভরা, ট্রাইবালরা তাঁদের সহযোগিতা করছে না বরং বিভিন্ন স্বদেশী ও বিদ্রহী গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তাদের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করছে এবং দেশীয় রাজন্যবর্গের আনুগত্য করছে। তখন তারা দেশীয় এলিট শ্রনীর শিক্ষিত যুবকদের স্কলারশিপ দিয়ে ইউরোপে লেখাপড়া ও বিভিন্ন আকর্শনীয় সরকারি চাকুরীতে নিয়োগ দেয়া শুরু করলো, সে ক্ষেত্রে হিন্দুদের প্রাধান্য থাকলেও মুসলমানদের প্রবেশধীকর ক্ষীণ ছিলো, ছিলোনা বললেই চলে। তার পূর্বে দেশীয় লোকেরা চাটুকার, দালাল, সরবরাহকারী, দাশ শ্রমিক, দোভাষী ও ঠিকা কামলা দিতো। বৃটিশদের বৃটিশ সিভিল সার্ভিসের নিয়মের অনুকরণে তাদের দ্বারাই তৈরী, আইসিএস, ও প্রভিন্সিয়াল সিভিল সার্ভিস কমিশন গঠন করা হয়ে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো নেটিভ দের মধ্যে এলিট শ্রেনী, দালাল শ্রনী, সহযোগী শ্রেনী তৈরী করে সাধারণের থেকে আলাদা করা এবং তাদের ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ দীর্ঘায়ীত করার জন্য নেটিভদের মধ্যে তাদের সাপোর্টার তৈরী করা, সহযোগী তৈরী করা। যা দেশ ভাগের পরে সিএসপি, ডাব্লিউ পিসিএস, ইপিসিএস, বিসিএস রূপে পরিবর্তিত, পরিবর্ধিত হয়।
যেমন গ্রাজুয়েট ও পোষ্ট গ্রাজুয়েট ইঞ্জিনিয়ারদের সহযোগিতার জন্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমার কাজের সহায়তা ও ড্রইং স্কেচ, ইষ্টিমেট বোঝা ও লেবার পরিচালনার জন্য একজন সুপারভাইজার, ফোরাম্যন দরকার হয়। আবার লেবারদের মধ্যথেকে একজন লেখাপড়া যানা লোককে সরদার বা মাষ্টার রোল করতে দেওয়া হয়। ডাক্তারের সহযোগিতা করার জন্য নার্স, নার্সকে ও ডাক্তারের ফুট-ফরমায়েশ খাটার জন্য ওয়ার্ডবয়, আমাদের ক্যাডার, নেন ক্যাডার ও জেনারেল সার্ভিস গুলোও সে ভাবে কয়েক ভাগে ভাগ করে গঠিত হয়েছে। আমাদের সমস্যা কোটার চেয়েও জটিল। আপনাদের হয়ত মনে আছে, কেয়ারটেকার সরকারের সময় পিএসসি অফিসে সেনা সদস্যরা তদন্তে গেলে আলমারি খুললে ফাইল আর টাকার বান্ডিল ঝর ঝর করে পরতে থাকে। পিএসসি সব সময় সরকারী দেলের চাটুকার দিয়ে পুর্ন থাকে তারা সুযোগ সন্ধানি সু্যোগ পেয়ে আখের গোছায়। ড্রাইভার, ব্যাক্তিগত পিয়ন, দারোয়ান দিয়ে প্রশ্ন কনট্রাকট করে পৌছে দেয়, প্রার্থীরা গ্রুপ করে অর্থসংগ্রহকরে তা খরিদ করে, এর পিছনে পিএসসি’র বড়ো কর্তারা মূল হোতা, কোচিং সেন্টারও জরিত। আমাদের দেশে কোনো কোটাই কাজে লাগে না যদি আগে টাকার কন্টাক্ট না করে, এমনকি সকল পরীক্ষায় পাশ করেও এসাইনমেন্ট পাওয়া যায় না, ওয়েটিংএ থেকে মেয়াদ পার হয়ে যায়। আমাদের মূল সমস্যা দুর্নীতি, ঘুষ, স্বজন প্রিতি, প্রশ্ন বিক্রি, ঘুষ ছাড়া শুধু কোনো মুক্তি যোদ্ধায় কাজ হয়ে না। মুক্তি যোদ্ধা কোটা কখনো সম্পুর্ণ ফিলাপ হয় না, কারন তারা টাকা দিতে পারে না, তা ছাড়া ডি.ও. লেটারের পিছনেও খরচ করতে হয়, কোটা ছাড়াও আরো অনেক পদ থাকে।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অনুসরণ করা ইউরোপ, আমেরিকার পলিসির মত জাতীয় বীর মুক্তি যোদ্ধা ও পঙ্গু মুক্তি যোদ্ধাূের বিশেষ সুযোগ ও পুনর্বাসনের জন্য ৩০% কোটা চালু করেন যা সংবিধান ও সংসদ কর্তৃক স্বীকৃত, সদ্যস্বাধীন দেশে পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী, পিছিয়ে পরা নারী সমাজ, আদিবাসী সমাজের জন্য কোটা সিষ্টেম করে সকল স্তরের ভারসাম্য ও সমতা রক্ষার জন্যই জেলা কোটা সহ বিভিন্ন কোটা চালু করেন যাতে একটা ভারসাম্য পূর্ণ আদর্শ সাম্যবাদী সমাজ, সমাজতান্ত্রিক ও গনতান্ত্রিক অদর্শের অনুকরণে গঠন করা যায় যা বৃটিশদের মত দালাল সৃষ্টি করবে না। তবে তিনি কিছু রাজাকরকে সাধারন ক্ষমা করলেও তাদের জন্য কোনো কোটা রাখেন নাই, তাই যুদ্ধ শেষে অ মুক্তি যোদ্ধাদের ননকোলাবরেশন সার্টিফিকেট দিতে হয়েছে।
আমার কথা হলো বিসিএস ব্যাতীত চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষা, সমাজ সেবা, স্ব-উন্নয়ন, এন্টারপ্রেনেয়ার, উদ্যোক্তা হতে তো বাঁধা নেই, নানক্যাডার, সায়ত্ব শাসিত, টেকনিক্যাল, ভোকেশনাল, আইটি, কারিগরী বহু পেশা আছে সেখানে কোনো কোটা নাই। তা হলে ক দিন পর পর এ কোটা আন্দোলনের হোতা কারা, কি তাঁদের উদ্দেশ্য, তাঁরা কি চায়, তার অতিতর বর্তমান ভূত ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনা করেই সরকারকে ডিসিশন নিতে হবে। কোটা কতদিন থাকবে, কোন ক্ষেত্রে কত % থাকবে, আদৌ সংস্কার প্রয়োজন আছে কিনা এ গুলো ধিরস্থির ভাবে চিন্তা করতে হবে।
বিশ্ব প্রতিবন্ধী জরিপ অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ১০% কোনো নাকোনো ভাবে প্রতিবন্ধী, বাংলাদেশে জরিপে অবশ্য কম আছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য ক্যাডার বহির্ভুত চাকরীত ৫% কোটা পরীক্ষা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে দেওয়া আছে, বিশেষ কারিগরী দক্ষতা সম্পন্ন লোকেরা পায়। তবে তা কখনো কোটা পুর্ন হয় না। প্রতিবন্ধী শিক্ষিত যোগ্য লোকেরা সরকারি চাকুরীতে বহুবিধ বৈষম্যের শিকার হয় তাই সরকারি চাকুরী অপেক্ষা গঠনমূলক এনজিও, সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতে বেশি আগ্রহী। সবচেয়ে বড় অন্তরায় এ্যাক্সেসিবিলিটি তাঁরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতেই প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তদুপরি বাংলাদেশে ভবন, রাস্তা, যানবাহনে প্রতিবন্ধী বান্ধব এ্যাক্সেসিবিলিটি অনুযায়ী তৈরী করা হয় না। আমরা এ ব্যাপারে বহু আন্দোলন সংগ্রাম করেছি কিন্তু সরকারের, রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো স্বপ্রনোদিত ভাবে অবহেলা, অস্বীকার করে। সরকারও কোনো নীতিমালা মানতে বাধ্য করে না তাই প্রতিবন্ধীরা চিরকালই অবহেলিত। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিতরাই এ ব্যাপার অশিক্ষিত ও প্রতিবন্ধক, দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপ, আমেরিকা, চিন, জাপান, ইতালি সহ বিশ্বের অনেক দেশে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত পঙ্গুদের পুনর্বাসনের জন্য প্রতিবন্ধী কোটা চালু করেছিলো, তাদের দেশে সেই কোটা এখনও আছে। তা ছাড়া তাদের চলার মতো সামাজিক ভাতা, শিক্ষা ও কমিউনিটিবেজড পুনর্বাসন ব্যাবস্থা আছে, যা আমাদের নাই। আশাকরি সরকার এই বিষয় গুলোও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন।
লেখকঃ ঢাকা মহানগর উত্তর মোহাম্মদপুর থানার ৩১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আঃ রহমান শাহ্।