মোঃ ইব্রাহিম হোসেনঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দলের জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসায় দলটির গুরুত্বপূর্ণ শাখা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করার প্রস্তুতি চলছে। থেমে থাকা সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি প্রক্রিয়া এবং তৃণমূলে সম্মেলন সম্পূর্ণ করতে এরই মধ্যে টিম গঠন করেছে ওই দুই নগর আওয়ামী লীগ। আর কমিটিগুলোয় কোনো হাইব্রিড বা বিতর্কিত নেতা যেন পদ না পান সেদিকে নজর থাকবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দলীয় সূত্র জানায়, গোপনে আর কমিটি গঠনের সুযোগ থাকছে না। প্রতিটা ইউনিট সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা। নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুনে বিভিন্ন অলিতে-গলিতে দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে ঢাক, ঢোল পিটিয়ে সম্মেলনের দিন জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ তাদের অধীনে ২৬টি থানার সদস্য সংগ্রহ, নবায়ন প্রক্রিয়া ও ইউনিট কমিটি সম্পূর্ণ করার জন্য নগর নেতাদের সমন্বয়ে ২৬টি টিম (দল) গঠন করেছে। এসব দলে দুই থেকে পাঁচজন সদস্য রয়েছেন। মূলত তারাই সম্মেলনের নেতৃত্ব দেবেন।
দপ্তর সূত্র আরো জানায়, দলটি এরই মধ্যে তাদের ইউনিট কমিটির সম্মেলন করার জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ডে দিন-তারিখ ঠিক করেছে। ইউনিট কমিটির সম্মেলন শেষ হলে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠনের জন্য সম্মেলন শুরু করবে।
এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর মোহাম্মদপুর থানার ৩১ নং ওয়ার্ডের ৯, ১০, ১১ ও ১২ নং ইউনিট আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আগামী ১৪ অক্টোবর ২০২১ রোজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে।
এই সম্মেলনে ১২ নং বাজার ইউনিট আওয়ামী লীগের কে হচ্ছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক? তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে ব্যাপক আলোচনা ইতিমধ্যে চায়ের কাপে ঝড় উঠেছে।। এ দিকে সমর্থন পেতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন পদ প্রত্যাশীরা। ফলে সম্মেলনকে ঘিরে নতুন করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
সভাপতি পদে প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান ১২ নং বাজার ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনির হোসেন, মোঃ হাবুল মন্ডল সহ প্রমুখ।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শেখ মোঃ বিল্লাল হোসেন এবং আব্দুর রহিম দেওয়ান সহ প্রমুখ।
সভাপতি পদে আবারও প্রার্থী হওয়ার ব্যাপার জানতে চাইলে মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি আওয়ামী লীগ দলকে ভাল বাসি। দল করতে যেয়ে আমার বাজারে দোকান পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। দোকানদারী যাতে করতে না পারি তার জন্য নিয়মিত আমার দোকানের সামনে ময়লার গাড়ি রাখা হতো। আমি যদি এবার সভাপতি হতে পারি তাহলে এই বাজার ইউনিট কে ডিজিটাল আওয়ামী লীগে রূপান্তিত করবো এবং চাঁদাবাজ মুক্তি ইউনিট আওয়ামী লীগ গড়ে তুলবো।
বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনির হোসেন সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপার জানতে চাইলে তিনি জানান, উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত।এই আওয়ামী লীগ দল করতে যেয়ে এবং মানুষের অধিকারের কথা বলতেন যেয়ে বিএনপি/জামাত ও জাতীয় পাটি দ্বারা বিভিন্ন সময়ে অত্যাচারিত হয়ছে এবং জেল খেটেছেন।
গত ১৭ মে ২০২০ সালে রাতে শত শত মানুষের সামনে আমাকে পিটিয়ে নগ্ন করে টাউন হল বাজারে ছেড়ে দেয় এলাকার সন্ত্রাসীরা।তার পরেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ থেকে এক পা পিছু হটেননি। আমি যদি ১২ নং বাজার ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে পারি, তাহলে থানা ও ওয়ার্ড সকলকে সাথে নেয় শক্তিশালী আওয়ামী লীগ গড়ে তুলবো এবং বাজার থেকে চিরতরে সন্ত্রাসীদের বিতাড়িত করে ইউনিট আওয়ামী লীগের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ।আমি সকলের দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশী।
সভাপতি পদ প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে মোঃ হাবুল মন্ডল বলেন, আমি এই বাজারের ব্যবসায়ি। আমি যদি সভাপতি হতে পারি তাহলে বাজারের সকল ব্যবসাযিদের নিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।
সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী বর্তমান যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শেখ মোঃ বিল্লাল হোসেন বলেন, দেশের নিপীড়িত মানুষের জন্য জীবনকে উৎসর্গ করেছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তার রাজনৈতিক দর্শন জানতে হবে। জনগণের দুঃসময়ে পাশে না থাকলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হওয়া যায় না।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্ম ও আদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমি কোন চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীর সাথে জড়িত না। দলের জন্য যতটুকু পারি আমার পকেট থেকে খরচ করি। কোন চাঁদাবাজ বা ধান্দাবাজ পছন্দ করি না। আমি যদি ১২ নং বাজার ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারি তাহলে এই বাজার ইউনিট সকলকে সাথে নিয়ে শক্তিশালী আওয়ামী লীগ গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।আমি সকলের দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশী।
সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী বর্তমান যুগ্ম-সাধারণ আব্দুর রহিম দেওয়ান বলেন জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে দেশের মানুষকে একত্রিত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে যাচ্ছি। কোন চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীর সাথে জড়িত না। কোন চাঁদাবাজ বা ধান্দাবাজ পছন্দ করি না। আমি যদি বাজার ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারি তাহলে সকলকে সাথে নিয়ে শক্তিশালী বাজার ইউনিট আওয়ামী লীগ গড়ে তুলবো। আমি সকলের দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশী।
সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করতে কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের সারাসরি নির্দেশনা রয়েছে। জানতে চাইলে ৩১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব দিল মোহাম্মদ দিলু এবং সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউল্লাহ মাষ্টার বলেন এজন্য সর্বদা কড়া মনিটরিং করছি। আর বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে দলের যোগ্য ও ত্যাগীদের যোগ্য পদে স্থান দেওয়া হবে।’ এবার ইউনিট কাউন্সিলগুলো হবে একদম খোলামেলা এবং উদ্বুদ্ধ করার মধ্যে দিয়ে। কারণ ইউনিট যদি শক্তিশালী না হয়, তাহলে ওয়ার্ড, থানা কমিটিতে তেমন কর্মকান্ড লক্ষ্য করা যায় না।