মোঃ ইব্রাহিম হোসেনঃ
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. লায়েকুজ্জামান। রমজানে ভোজ্য তেলের বাড়তি দাম পাওয়ার লোভে তিনি ৫১২ লিটার সয়াবিন তেল মজুদ করেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
পুলিশ রাজধানীর মোহাম্মদপুরে লায়েকুজ্জামানের নিজের ও শ্বশুরবাড়িতে অভিযান চালিয়ে এসব তেল জব্দ করেছে। পরে তাকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে পুলিশ।
আজ ১২ মার্চ ২০২২ রোজ শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার।
গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন লালমাটিয়া এলাকার ওই বাসা থেকে ৫১২ লিটার তেলসহ এই লায়েকুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে গত ছয় দিনে বিভিন্ন জায়গা থেকে এই তেল সংগ্রহ করেছেন তিনি।
উপকমিশনার বলেন, লালমাটিয়ার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা লায়েকুজ্জামান। এর পাশেই তাঁর শ্বশুরের বাসাটিও তিনি দেখাশোনা করতেন। সেই বাসাতেই তিনি ৫১২ লিটার তেল মজুত করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, তিনি ব্যক্তি পর্যায়ে তেলগুলো কিনে জমা করে রেখেছেন। তাঁর কাছে এসব তেল কেনার রসিদ দেখতে চাইলে তিনি কৃষি মার্কেটের সূর্য এন্টারপ্রাইজের একটি রসিদ দেখান। পরে রসিদটি যাচাই করে দেখা গেছে, সেখান থেকে ১৫৯ টাকা দরে মাত্র ৪০ লিটার তেল কিনেছেন তিনি। বাকিগুলো তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন। আর সূর্য এন্টারপ্রাইজের ওই রসিদের মাঝখানে নিজ হাতে বাকি তেলগুলোর পরিমাণ লিখে বিভিন্ন দাম বসিয়ে দিয়েছেন। কয়েক দিন পর রমজানে আরও দাম বাড়তে পারে। তাই বাড়তি লাভের আশায় তিনি তেল কিনে মজুত করে রেখেছেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, লায়েকুজ্জামানের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় তাঁর সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। রিমান্ডে পেলে তাঁকে আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে অতীতেও তিনি এমন কাজ করেছেন কিনা, কিংবা তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানা যাবে।
কোনো ব্যক্তি একসঙ্গে এতগুলো তেল বিক্রির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কৃষি মার্কেটের ওই ব্যবসায়ী কেন একজনের কাছে একবারে ৪০ লিটার তেল বিক্রি করলেন সে বিষয়ে ব্যবসায়ীকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। এ ছাড়া ভোজ্যতেলের এই সংকট সৃষ্টি করতে ব্যবসায়িক পর্যায়ে কেউ মজুতদারি করছে কি না, প্রতিনিয়ত মনিটরিং করে যাচ্ছি। আমরা যখনই সংবাদ পাব, অভিযান পরিচালনা করব।’
গত ৬ মার্চ থেকে ছয় দিনে লায়েকুজ্জামান বিপুল পরিমাণ তেল মজুত করেছেন জানিয়ে পুলিশের ডিসি বলেন, ‘৪০ লিটারের বাইরে বাকি তেলগুলো কোথা থেকে সরবরাহ করেছেন সে বিষয়ে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। কারণ অন্য জায়গা থেকে কিনলে সেটার রসিদ থাকত!’ জনসাধারণকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এ ধরনের মজুতদারি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।