করোনাভাইরাস ছোঁয়া থেকে বাঁচতে চাহিদা তুঙ্গে জীবাণুনাশক পণ্যের। ফার্মেসির দোকানে এখনো হেক্সিসল-হ্যান্ডরাব, ডেটল, স্যাভলন লিকুইড চাহিদামতো মিলছেনা। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে প্রথম শনাক্তের ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো ৮ই মার্চ। এরপর থেকে বেড়েই চলেছে জীবাণুনাশক পণ্যের চাহিদা।
কিন্তু এ চাহিদাকে পুঁজি করে মানহীন জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও লিকুইড অ্যান্টিসেপটিক এবং নি¤œমানের মাস্ক, পিপিই, গগলস, গøাভস পণ্য সামগ্রী মিলছে কুমিল্লা নগরীর ফুটপাত থেকে শুরু করে স্টেশনারী ও প্রসাাধনী দোকানে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন এসব ব্যবহারে রয়েছে ফলস সেপটির হাতছানি। যাতে সংক্রমণ আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার ফার্মেসিতে স্যাভলন, ডেটলের দাম পণ্যের গায়ে উল্লেখিত দামের চেয়ে ৩০গুন বেশি রাখছে। এমন অভিযোগসোধারণ ক্রেতাদের।
কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়, রামঘাট, টমসনব্রীজ, রাজগঞ্জ, পুলিশলাইন, চকবাজার, কাপড়িয়াপট্টি, রাণীরবাজার ও শাসনগাছা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কসহ নানা ধরণের সুরক্ষা সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। বোতল ও রঙ দেখে তাৎক্ষণিকভাবে আসল ও নকল জীবাণুনাশক পণ্যের পার্থক্য বোঝার উপায় নেই। আবার স্টেশনারী দোকানেও নামিদামি কম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক পণ্যের জায়গা দখলে নিয়েছে অখ্যাত কিছু প্রতিষ্ঠানের বানানো পণ্য।
ফুটপাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতলের গায়ে যে দাম উল্লেখ রয়েছে তার অর্ধেকের কম দামেও বিক্রি হচ্ছে। আবার ডেটলের কাঁচের আসল বোতলে নকল লিকুইড ১৫/২০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আসল স্যাভলনের মতো দেখতে সেভলন, সেভলো, সেভোলন নামে ফ্যামেলী সাইজের ১০০০মিলির বোতলের লিকুইড অ্যান্টিসেপটিক মিলছে কমদামে। আর কম দামে পাওয়ায় ভোক্তারাও কিনছে দেদারসে।
এদিকে নি¤œমানের মাস্কও পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাতে। এগুলো দিয়ে নিঃশ্বাস নিঃসরণ না হওয়ায় উল্টো শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া মুখে এক ধরনের উটকু গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
হার্টকেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, সংক্রমণ ঝুঁকি এড়ানোর জন্য রাস্তাঘাটে, ফুটপাত থেকে জীবন রক্ষাকারি ওষুধ, জীবাণুনাশক পণ্য কেনা যাবে না। নকল, মানহীন জীবাণুনাশক ও সুরক্ষা পণ্য ব্যবহারের কারণে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ তো দূরের কথা, সংক্রমণ আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা যারা ব্যবহার করছেন তারা ভাবছেন সুরক্ষিত আছেন। কিন্তু তিনি বা তার পরিবার একটা ফলস ভাবনায় রয়েছেন। যা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই এসময়ে মানুষকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।
প্রশাসনের মনিটরিং বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, কুমিল্লা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, নতুন গজিয়ে উঠা বা লোকাল ব্র্যান্ডের জীবাণুনাশক পণ্যগুলো স্যানিটাইজারের ফর্মুলা মেনে তৈরি করছে কি না, সেটা নিয়ে আমরা সন্দিহান। মানুষকে জিম্মি করে সংকটে ফেলে ব্যবসা করে অতি মুনাফা করার যে প্রক্রিয়া চলছে এটা বন্ধ হওয়া উচিত। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতের নজরদারি প্রয়োজন।