বয়স যত লম্বা হচ্ছে ততই দেখে যাচ্ছি, মুরুব্বিদের কাছে বৃটিশের কথা, দুর্ভিক্ষের কথা, দেশ বিভাগের কথা, সরনার্থীর কথা, ৫৪র মন্বন্তরের কথা শুনেছি, ফাতেমা জিন্নাহর ইলেকশন দেখেছি, আয়ূব, ইয়াহিয়া, ৭১, মুক্তি যুদ্ধ দেখেছি করেছি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, মোস্তাক, জিয়া, সাত্তার, এরশাদ, খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা, মাঝেমধ্যে কেয়ার টেকার, মঈনুদ্দিন ফখরুদ্দীন, ড. ইউনুসের অন্তরবর্তি চলছে। বিভিন্ন সময় সরকারের নাম টাইটেলে পরিবর্তন হয়েছে, কখনো, মৌলিক গনতন্ত্র কখোনো মার্শাল “ল”, কখোনো মুক্তি যুদ্ধ, যুদ্ধকালিন সরকার, জরুরী আইন, কখনো গনতন্ত্র, কখোনো, সামরিক শাসন, কখনো সৈরাচার, আবার কেয়ারটেকার, গনতন্ত্র, গনতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র, অন্তরবর্তি সরকার অনেক কিছুই দেখলাম, কিন্তু গৃহীনিদের একটা কথার উত্তর কিছুতেই দিতে পারছিনা কারন গৃহীনিরা অর্থনীতির জটিল সমীকরন বুঝে না বুঝতে চায় না। তারা জানতে চায় চাল, ডাল, তরকারি, ডিম, কলা, কবে সস্তা হবে ? তারা জিডিপি, এডিপি, জিএনডিপি বুঝে না। তারা টানাটানি আর অভাবের সংসার অনেক কষ্ট করে চালায়, চাল থাকতো তেল থাকে না, পান্তা থাকলে লবন কাঁচা মরিচ থাকে না, দুধ থাকলে চিনি থাকে না, তরকারি কিনলে মসলা কিনার টাকা থাকে না। ডাক্তার দেখালে ঔষধ পথ্য হয় না অথচ গিন্নীরা তাদের সন্তানকে দুধেভাতে রাখতে চায়, এটা হয়ত খুব বেশী চাওয়া না।
এক সরকার যায় আর এক সরকার আসে আসার আগে কথার তুবড়ি ছুটিয়ে আশ্বাসের ফুলঝুরি বিছিয়ে জনগনের মনভুলিয়ে গনরায় নেয় আবার কখোনো তার প্রয়োজনও মনে করে না। আশার পরে শপথ নিয়ে ৬ মাস ফুলসজ্জা তার পর নতুন নতুন কমিশন গঠন, নতুন করে, বেতন কমিশন, ওয়েজ বোর্ড, শ্রমিকদের জন্য মজুরি নির্ধারন কমিটি, মুদ্রাস্ফিতি নিয়ন্ত্রণের কথা, নতুন বিনিয়োগের কথা, উন্নয়নের কথা, আশ্রয়হীনের আশ্রয়ের কথা, চর লাইভলিহুড ডেভেলপমেন্টের কথা, খাদ্য, কৃষি, উন্নয়ন অগ্রগতি, স্বনির্ভর, আত্মনির্ভরশীল উৎপাদন, উন্নত দেশের সমকক্ষ হওয়া, উন্নয়নের কথা বলে আশ্বাসের মালা গাথা হয়ে, কিছু কাজ কর্ম হয়, কিছু চুরি, কিছু দুর্নীতি, কিছু পাচার, কিছু রাহাজানি হয়, নৌকায় পানি উঠলে তা তলায় জমা হয়, সকল ক্রীয়া কর্মের আবারর্জনা তলানিতে জমা হয়, তাই কৃষক শ্রমিকের খুব একটা ভাগ্য পরিবর্তন হয় না, যা হয় তা জীবন জাপন ব্যায় বৃদ্ধি হয়ে আর উন্নয়নের রেসিডিউ বা বাই প্রডাক্ট, বর্য, সমাজে টাউট, বাটপার, গরিবের সম্পদ চুরির সিন্ডিকেট, চোরাকারবারি, মাদক সেবী, মাদক সিন্ডিকেট, বেনিয়া, সুদখোর, দালাল, লুটেরা তৈরী হয় আর এদের জন্যই উন্নয়ন টেকসই হয়ে না। আমাদের উন্নয়নের আর একটি অন্তরায় আমরা জাতীয় সম্পদ, রাষ্ট্রের সম্পদ, সরকারী সম্পদ, জনগনের সম্পদের পার্থক্য বুঝি না, তাই নির্বীচারে জাতীয় সম্পদ লুটপাট, আত্মসাৎ করে ব্যাক্তিগত সম্পদে পরিনত করি এবং সন্তান ও ভবিষ্যতে নিরাপদ ভোগের জন্য বিদেশে পাচার করি। আমরা যদি বিশ্বাস করতাম যে সন্তান, সম্পদ ও সুখ সান্তি দেয়ার মালিক এক আল্লাহতায়ালা তা হলে হয়তো এতটা খারাপ অবস্থা হতো না।
ভুটানে জিডিপির পরিবর্তে নাগরিক সুখ সুবিধাকে হিসাব করা হয়ে। আমাদের তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়ন অগ্রগতি ইউরোপ আমেরিকার সাথে তুলনীয় নয়, এখানে খাদ্য ও নিত্য পন্যের মূল্য, সর্নমূল্য, ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ, যোগাযোগ, শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারন, আয়ের উৎস বৃদ্ধি সহ মূল মৌলিক চাহিদা ও অধিকারের সমন্বয় করে মানুষের সুখ স্বাচ্ছন্দ বৃদ্ধি করাই উন্নয়ন, ৫ টাকা ট্যাক্স নিয়ে ২ টাকার উন্নয়নকাজ করা, ১ টাকা প্রশাসনিক ব্যায়, ২ টাকা ভাগাভাগি করে বিদেশে পাচার করার নাম উন্নয়ন নয়, একে উন্নয়ন বলা যায় না। এদেশের উন্নয়নের জন্য দেশাত্মবোধ, সততা, সামাজিক মূল্য বোধ, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, জাতীয়তাবাদ, বয়স্কদের সম্মান করা এবং তাদের দায়ীত্ব নেয়া একটি অপরিহার্য অংশ কিন্তুু মালথাসের মত অর্থের মাপকাঠিতে উন্নয়নের বিচার করায় কিছু স্থাপনা, প্রতিষ্ঠান তৈরী হলেও তা স্থায়ী জনকল্যানকর না হয়ে চোর চোট্টার আখরায় পরিনত হচ্ছে। উন্নয়নকে বাস্তবমূখী করতে ষ্টেক হোল্ডারদের মতামত নিতে হয়, পার্টিসিপেটরি হতে হয় তা না হলে রডের বদলে বাঁশের উন্নয়ন হয়। উন্নয়নের নামে দেশ থেকে যত অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে তাতে ২ টি ন্যাশণাল বাজেট করা যেতো। অর্থ পাচার অপেক্ষা আমাদের মূল্যস্ফিতি তুলনা মূলক কম কারন কৃষক, শ্রমিক, ওয়েজ আর্নাররা এবং রপ্তানি ব্যাবসা বৃদ্ধি দেশের জন্য এই ঘার্তির উপর ভর্তুকি হয়ে টিকিয়ে রেখেছে দেশটাকে। আমাদের সেবা সংস্থা, উন্নয়ন সংস্থাগুলো যোনো চোরের সিন্ডিকেট হয়ে যাচ্ছে, ১ টাকার সেবা নিতে ৫ টাকা খরচ করতে হয়। সামনে দ্রুত এই স্খলন থেকে মুক্তির জন্য কর্মমূখী শিক্ষা, স্বকর্ম সংস্থান, ওয়েজ আপনার এর উন্নয়ন, কৃষক শ্রমিকের দক্ষতা কারিগরী শিক্ষা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য, দেশের জন্য একটি বাস্তবমুখী উন্নয়ন পিকল্পনা প্রনয়ন ও দুর্নীতি হ্রাস, ন্যায়ভিত্তিক সমজ, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠাসহ, সকল হত্যা গুম, খুন, দখলবাজী, অন্যায়ের ন্যায় বিচার করা তাতখনিক জরুরী কাজ। জনগন তাই ই আশা করে ছিলো কিন্তু জনগন বারবার আশাহত হয়েছে। বাকিটা বর্তমান ও ভবিষ্যতের আশায় ছেড়ে দিলাম দেখা যাক কি হয়।
আঃ রহমান, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও সমাজ সেবা কর্মী।
লেখকঃ আঃ রহমান শাহ্, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও সমাজ সেবা কর্মী এবং খাস খবর বাংলাদেশ পত্রিকার উপদেষ্টা।