জনাব রবিউল আলমঃ পর্ব ৩ঃ ১২ ডিসেম্বর ঘুম থেকে উঠেই খাওয়ার ভাবনায় অস্তির। রাতে হোসেন সাহেবের বাড়ী থেকে চালের ব্যবস্তা হয়ে ছিলো, দরা মাছের তরকারি মজা করেই খাওয়া হয়েছে। মা কিছুতেই বাড়ী থেকে বের হতে দিবেন না। দাদাকে দায়ীত্ব দেওয়া হলো আমাকে দেখে রাখার জন্য। দাদার মাথার চুল নারতে নারতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে, বুঝতে পারিনি। চোখে পরার সঙ্গেই পালানো ফন্দি,সফল ও হলাম। অনেক বাড়ীর উপর দিয়ে বাজারে আসলাম। আমাদের দোকান থেকে ৮/১০ সের মত আলু নিলাম, হটাৎ অনেক লোকের আগমন। দুই ঘন্টার জন্য কার্ফিও শীথিল করা হয়েছে। শহিদুল্লাহ সাহেবের আকড়া মন্দীরের পাশের রেশন দোকান থেকে বিনা পয়সা চাল, গম তেল দেওয়া হচ্ছে। মাগনা পেলে বাঙালির যা হয়, আমারও তাই হলো। ৩০/৩৫ সেরের মত হলো আমি চাল নিয়ে, নিয়েছি। আলু সহ এখন আর মাথায় উঠাতে পারছিলামনা। অনেকের কাছেই সহায়তা চাইলাম। কারো কাছে সময় নেই দুই ঘন্টার জন্য কার্ফিও শীথিল করায়। অবশেষে একজন সদয় ব্যাক্তি আমার মাথায় উঠিয়ে দিলো চাল,আলুর বস্তা। আমার ঘার, বুকের নিঃশ্বাস বন্দ হয়ে আসছে। কোনোক্রমে ঘদীঘর পর্যন্ত গিয়েই বস্তা নামাতে হলো। আবার কিছু দুর কমিনিটি সেন্টার। এমনি করে দুর্ঘা মন্দীর পর্যন্ত। আর পারছিলামনা, পথে পরিচিত একজনকে আমার ভাই সফিউল্লাহকে খবর দিতে বললাম। কার্ফিওর সময় শুরু হওয়ার কিছু আগেই ভাই, বাবা ও দাদা সহ অনেকেই হাজির হয়ে বস্তা নিয়ে বাড়ীতে। মা যে অনেক কান্নাকাটি করেছে, আমাকে না পেয়ে, দাদার উপর রাগ করেছে। বাড়ীর পরিবেশ দেখেই বুজা যাচ্ছে। বাবার মাইর থেকে বঞ্চিত হলার, বস্তা টানার করুন অবস্থার জন্যে। লাকরী ছাড়া ১০/১২ দিনের খাওয়ার ব্যবস্থা হওয়াতে কিছুটা খুসীই হয়েছে সবাই, বুঝতে পারছি। অনেকটা ক্লান্ত হয়েই ঘুমিয়ে পরেছিলাম। সন্ধ্যায় অনেকে বিকট বিকট আওয়াজে ঘুম ভেংগে গেলো। অনেক মানুষের চিক্কার চেচামেছির আওয়াজ হচ্ছে। হোসেন সাহেবের গলির শেষ মাথায় দারোগার বাড়ীতে আওয়াজ মনে হতেই কৌতূহল নিয়ে বাড়ীর পেছন দিয়ে, আস্তে আস্তে পুলপার থেকে যে খালটা বড় খালের সাথে মিসেছে, বটগাছের পাশ দিয়ে।আমি সে পথেই এগুছিলাম। পরিস্কার দেখতে পেলাম অনেক মানুষকে হাত ও চোখ বেধে, বটগাছের নিচ দিয়ে গতকাল দেখে আসা মৃত্যু লাশের পুরিতে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের চিক্কার, কান্নাকাটি আওয়াজেই পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। আমাকে চুপি চুপি দেখার জন্য দারোগার বাড়ীর পাকিস্তানি পুলিশ দরে ফেললো। বাড়ীতে নিতেই দারোগা সাহেব আমাকে চিনতে পারে। তার আগেই ধুমুর ধুমুর মারের আওজাই দারোগা সাহেব ঘর থেকে বের হয়েছিল। মাইর থামিয়ে, মা ও বাবাকে খবর দেওয়া হলো। বাবা ও মাইর শুরু করলেন, অনুমতি ছাড়া বাড়ী থেকে বের হওয়ার জন্য। দারোগা সাহেব মাইর থামিয়ে, বাবাকে বুঝিয়ে দিলেন দেশের অবস্থা ভালো নয়। একটু সাবধানে থাকতে হবে। কখন কি হয় বলা যাচ্ছে না। বিছিন্নবাদিরা পাকিস্তান সরকারকে অত্যন্ত বেশী বিরক্ত করতাছে। তোমার ছেলের ভাগ্যভালো গুলি করেদেন নাই। ঘরে আসার পরে মাও মনের দুঃখে আরেক বার মারতে শুরু করলো। দাদা অসহায়ের মত করেই বললো, আর কত মারবে নাতিটাকে ? এবার থামো। মা কান্তে কান্তে আমার হয়েছে মরন। দাদার কাছে শুয়ে আছি, ঘুম আসছে না শরিলের ব্যাথা, বটগাছে জুলিয়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের চিক্কারের আওয়াজে। শেষ রাতে একটু আওয়াজ কমে আসছে। একসময় থেমে গেলো। কখন ঘুমিয়ে পরেছি, বলতে পারবোনা। আমার জন্য মাকে অনেক কথা শুনতে হয়, আমার জন্য মাকে ভাবতে হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের নয় মাস সংসার আমাকেই চালাতে হয়েছে। কর্ম জীবন শুরু করেছিলাম সেখান থেকেই। লেখা পড়া স্কুল জীবনেই শেষ করেছিলাম। পরে নাইট স্কুল থেকে কিছুটা বিদ্যা অর্জন করতে হয়েছে। না হয় ভুলবাল দিয়েও আমার দেখা রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবীদের বধ্যভুমি সম্পর্কে লেখতে পারতামনা। চলবে, আগামীকাল ৪ চতুর্থ পর্ব।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামলী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।