জনাব রবিউল আলমঃ ক্যামেরা লাগানো হলো, পুলপার মন্দিরের কোনা থেকে আমি হাটা শুরু করলাম। মসজিদের পাশ দিয়ে চলছি।ক্যামেরা আমার পেছনে ছিলো। আস্তে আস্তে আগে চলে গেলো। কাজী সাহেবের ও টিক্কা খানের বাড়ীর গলিতে ক্যামেরা স্থায়ী করা হলো। আমার সাথে বিদেশি সাংবাদিক মহিলা ও পুরুষ দুইজনই হাটছে। আমার সাথে কথা বলার অভিনয় করছে, আমি না বুঝেই মুখ লাড়াচ্ছি। তবে দোভাষী আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে বটগাছ দেখার ও দেখানোর আগ্রহ থাকতে হবে আপনার মনে। মুখে বলতে হবে, এখান দিয়েই ফিজিক্যাল কলেজ থেকে হত্যার জন্য কিভাবে নিয়ে এসেছিল। সেই ঘটনা গুলো স্পষ্ট করে বলতে হবে। আমি আমার চিরাচরিত ভঙ্গিতে বলে চলেছি, ওরা দুই জন হাটছে। ক্যামেরা সামনে ও পেছন থেকে কাজ করছে। বটগাছের কাছে গিয়ে গুলি ও বেনোটের চিহ্ন গুলো দেখাচ্ছি গাছের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে। জুলানো রশি, ছেড়া কাপর ও পাটি। পুশকুনির ভেসে থাকা লাশ। ক্যামেরা আমাদের সাথে সাথে চলছে। বটগাছ পেরিয়ে ইটের খোলার, ইটা বানানো পটে। যেখানে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের লাশগুলো পুতে রাখা হয়েছে। এখন আমি আর একা নই। অনেক স্বজন হারা, দেখতে আসা দর্শনার্থী,সংবাদ কর্মীরাও আমার কথাগুলো শুনছেন। ক্যামেরা চলছে। আমি বলেই চলেছি ৮ ডিসেম্বর থেকে সান্ধ্য আইন বলবৎ করা হয়েছিল। মানুষ ঘর থেকে বের না হলেও পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নিরহ জনসাধারণকে জোর করে ঘর থেকে দরে এনে এই ভাবে হত্যা করেছে। অনেক মা-বোনকে নির্যাতন করেছে। বাঙালী রাজাকাররা বাড়ী বাড়ী নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে। হিন্দু মুসলমান, সরকারী চাকরীজীবী, শিহ্মক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী বাছাই করেছে। এই নিঃসংশ হত্যা পৃথিবীতে আর হয়েছে কিনা আমার জানা নাই। স্বাধীনতার মুল্য এত রক্ত দিতে হবে, আমরা বুঝতে পারিনি। ক্যামেরা নিয়ে আর হাটতে পারছেনা। আমাকে থামানো হলো। ধুব্বার উপর বসে দোভাষী অনেক সময় নিয়ে বিদেশি সাংবাদিকদেরকে বুজিয়ে বলছে। আমাকে এক পেকেট বিস্কুট দেওয়া হয়েছে। আমি বিস্কুট খাচ্ছি আর ঘুরে ঘুরে দেখছি, মাটিতে পুতে রাখা লাশগুলো কিভাবে ফুলে উঠছে। চাপা মাটি গুলো সরে যাচ্ছে। কুকুরগুলো খেতে চায়, খেতে পারছেনা অনেক লোকে বির থাকাতে।মিছেই গেও গেও করছে। হটাৎ আমাকে জরিয়ে দরলেন বিদেশিরা। আমি বুঝতে পারিছি, সাহ্মাৎকার ভালো হয়েছে। দুপুর হয়ে গেছে। হটাৎ শ খানেক লোক একজন লোকের পেছনে দৌড়াচ্ছে। কিছু দুর যাওয়ার পরেই লোকটা পরে গেলো।সবগুলো মানুষ তাকে গ্রিরে রেখেছে। আমরা বুঝতে পারছিলামনা, কি হচ্ছে। আমার কৌতূহল অনেক, দেখার ও জানার জন্য। কাচুমাচু করছি। এমন সময় দোভাষীই জান্তে চাইলেন ঐখানে কি হয়েছে। আমি তাকে বললাম, চলেন না দেখে আসি। ক্যামেরা নিয়ে সেখানেই যাওয়া হলো। ছবি তুলছে। লোকজন ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করা কঠিন। আমার পরিচিত একজনকে জিগ্যেস করাতেই জান্তে পারলাম একজন রাজাকার দরে এনে হত্যা করেছে। আমি দোভাষীকে বলাতেই, দোভাষী আমাকে বললেন এই সিন উঠানো যাবেনা। বিদেশিকে বলাও যাবেনা। পাকিস্তানীরা আমাদেরকে হত্যা করেছে। এখন আমরাও হত্যা করছি,প্রার্থক্য কি, প্রশ্ন করা হবে।বুদ্ধি করে দোজনে মিলেই বিদেশি সাংবাদিকদের অন্যত্ব নিয়ে গেলাম। চলবে ষোল ১৬ তম পর্ব নিয়ে আসবো।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামলী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।