জনাব রবিউল আলমঃ বাড়ী আসতেই রাস্তায় লোকে লোকারন্য, কারো মাথায় চালের বস্তা, কারো মাথা ডাল, চিনি, তেলের কাটুন, অস্ত্র। যে যা পারছে, নিয়ে চলেছে। কেউ খালি হাতেই ফিজিক্যাল কলেজের দিকে ছুটছে। কৌতূহল নিয়ে আমি ছুটলাম, কাছাকাছি যেতেই অপরপ্রান্ত থেকে গুলি করা হচ্ছে। বর্তমান মোহাম্মদপুর থানার পেছনের কলোনী থেকে। থমকে দ্বারালাম, পাশে থাকা মটকী, যুদ্ধ চলার সময় রাজাকারদের সংবাদ দাতা ছিলো। রায়ের বাজারে মটকী নামে বেপক পরিচিত। আজও তার নাম জানা হয় নাই। দেশ স্বাধীন হওয়াতে পহ্ম ত্যাগ করেছে বলেই আমার মনে হয়েছে। হাতে একটা রাইফেল, পচুর গুলি তার কাছে। কলেজের পাশে, এখন যেখান ভ্যানগাড়ীতে ফেরীওলারা বসে। সেখানে দ্বারিয়েই প্রতিপহ্মের গুলির জবাব দিচ্ছে, গুলির মাধ্যমে।আমি একটু ভিতরের দিকেই ছিলাম। হটাৎ একটা গুলি মটকীর পাছায় এসে লাগলো, সামনে দিয়ে বেপক মাংস নিয়ে বের হয়ে গেলো। মুহুর্তে মধ্যেই মাটিতে লুটিয়ে পরলো, জনশুন্য হয়ে পরলো ফিজিক্যাল কলেজ। লাশ দীর্ঘ সময় সেখানেই পরেছিল। পেটের খিধা, মনের ভয় লাশের কাছে যাওয়ার সাহস না থাকায়, কাপুরুষের মতো পালিয়ে আসলাম বাড়ীতে। মনের মাঝে মটকীর জন্য ঘৃনাও ছিলো বাঙালীদের উপর অত্যাচারের সহায়তার জন্যে। দুপুরের খাওয়ার পরে, রাস্তায় বের হতেই একজন মানুষ আমাকে জিগ্যেস করলো। এখানে মানুষ হত্যা করেছে কোথায়। আমি বললাম ফিজিক্যাল কলেজের সামনে এই মাত্র একজন মানুষ হত্যা করেছে বিহারীরা। তিনি বললেন আরে না, বিবিসি, বয়েজ অব আমেরিকা ও বিদেশে সংবাদ মাধ্যমে থেকে বলা হচ্ছে রায়ের বাজারে বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। তুমি কি আমাকে সেই যায়গাটা দেখিয়ে দিতে পারো। আমার মনে পরলো সেই মাছ দরার কাহিনী, সকালেও আমি সেই যায়গাটায় গিয়েছিলাম, সেইখানেরই খোজ করতাছে মনে হয়। আমি তাকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। রাস্তা থেকে খেতের দিকে যেতেই চোখে পরলো শত শত মানুষ বধ্যভুমিতে যাচ্ছে, অনেকই খুজাখুজি করছে। আমরা সেখানে পৌচাতে দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে। সকালের সেই শকুন ও কুকুর নাই। মানুষের আগমনে সব যেনো এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। ইটের খোলা থেকে লাশ উত্তোলন চলছে। একজন মধ্য বয়সী নারী একটি লাশের পা দরে টানাটানি করছে, লাশটা কিছুতেই উঠাতে পারছেনা। আমি কাছে গিয়ে জিগ্যেস করলাম,বললাম আপনি এভাবে একা এই লাশ উঠাতে পারবেন না, বাড়ী গিয়ে দুই একজন আপনজনকে নিয়ে আসুন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, বাবারে আপন বলতে আমার আর কেহ বেচে নেই। আমার কিছুটা মায়া হলো। তার সাথে লাশের পা দরে টান দিতেই পা পিছলিয়ে কায়দা পরে গেলাম। ইটের খোলার উপরে দ্বারানো, আমার বয়সী পরিচিত তিনজন ছেলে এগিয়ে এলো আমাকে উদ্ধার করতে। অনেকে কষ্টে আমাকে উদ্ধার কলেও তাদের করুন অবস্থা হয়েছে কাঁদায় মেখে। আমি তাদেরকে অনুরোধ কলাম, তোদের যা হবার হয়েছে। এই মানুষটাকে একটু উপকার কর। এই মায়ের আপন বলতে কেহ আর বেচে নেই। এই লাশটা তার পহ্মে একা উঠানো সম্ববও না। গোছলতো করতেই হবে, চল লাশটা উঠিয়েদেই। ওরা সবাই রাজি হলো। লাশ উঠিয়ে একটা রিকসায় তুলে দিলাম। যাওয়ার আগে জিগ্যেস করলাম, মা এই লাশ কি আপনার স্বামীর। আবারও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, হয়তো হবে। আমিতো আমার স্বামীর মনে করেই সমাধী করবো। পা ও গলার চিহ্ন দেখেতো আমারই মনে হয়। না হয় মনে করতে হবে দেশের একজন বুদ্ধিজীবী লাশ সমাধী করলাম। আমার হাতে একজন বুদ্ধিজীবীর সমাধী হওয়া কম কিসের। আমরা চারজনই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। মানুষ এমন করে ভাবতে পারে ? জীবনের সহায় সম্বল, আত্নীয় সজন সব হারিয়ে মানুষ পাগল হয়ে যাওয়ার কথা। এখনো দেশের জন্য, জাতির জন্য ভাবনার বিষয় থেকে আমাদের মনটাও কিছু একটা করার জন্য উৎসাহিত হয়ে উটলো। সবাই বুদ্ধি করলাম অসহায় মানুষের পাশে থেকে লাশ উঠানো কাজ করবো আজ। এক এক করে ৪৫ টি লাশ উঠিয়ে দিলাম। তার মাঝে সেলিনা পারভিনের লাশও হয়তো ছিলো। পরিচয় নেওয়ার সময় ছিলোনা। কোনো কিছু পাওয়ার আশায়ও না। আলো না থাকায় অনেকেই চলে গেছেন। লাশে আকৃতিও বুজা যাচ্ছে না। কিছুটা নিরবতায় শরিলের দুর্গন্ধটা একটু বেরেই চলেছে, পেটের খুধাও অনুভব করছি। সবার কাছে হ্মমা চেয়ে নিলাম। আগামীকাল ১৭ ডিসেম্বর সকালে আসতে অনুরোধ করে বাড়ীর পথে। মা আমাকে দেখেই চিক্কার দিয়ে উঠলো। বুজিয়ে বলাতে আর রাখ করলোনা। নাকে কাপর দিয়ে অনেক কষ্টে আমাকে পরিস্কার করলো। খাবার দিয়েও কাছে বসলো না। রাতে আমার সাথে কেউ ঘুমাতে আসলো না। আমিও ঘুম থেকে বেশী দুরে থাকতে পারলামনা। সাবাদিনে ক্লান্তিই আমাকে আমার লহ্মে পৌচিয়ে দিয়েছে, ঘুমের রাজ্যে। অস্টম ৮ পর্ব নিয়ে আসবো।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামলী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।