জনাব রবিউল আলমঃ লাশের বিকৃত রূপ ও মাটিচাপার স্তুপ দেখে বুঝার উপায় নাই কত বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে রায়ের বাজার বদ্ধভুমিতে। আজ গায়ে কাদা না মিসলেও গায়ে প্রচন্ড দুর্গন্ধ। পচা লাশের গন্ধ বাতাশের সাথে মিসেই শরিলের এ অবস্থা। তার উপর সারাদিনের অনাহার। এদিক সেদিক ঘুরাঘুরিতে ক্লান্ত লাগছে। বিগত দিনের ক্লান্তিও পেয়ে বসেছে। আমি আর পারছিনা দ্বারিয়ে থাকতে। মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না বাড়ী যেতে। বেলা এখনো অনেক অস্ত যেতে বাকী আছে। সময় যাচ্ছে জনসমাগম বারছে এক একজন বার বার আসছে স্বজন খুঁজে না পাওয়ার জন্য। তবু চেষ্টার কোনো ক্রুটি রাখছেন না খুঁজতে। দুর্গন্ধ বারতে ছিলো, ইটের খোলার চারিপাশের অংশ। ইট বানানোর পট গুলো আস্তে আস্তে ফুলে উঠছে, মাটিচাপা দেওয়া লাশ গুলো ফুলে উঠাতে। কুকুর গুলো লাশ টেনেটুনে মাটি ফাক করাতে। আমাকে বাড়ী ফিরে আসতেই হলো। আজ আর মা গোসল করাতে আসলেন না। হাতে একটা সাবান গুঁজে দিয়ে খাল থেকে গোসল করে আসতে বললো। অনেকখন গোসল করেও শরিলের গন্ধ নিরাময় করা যাচ্ছে না। খানিটা থান্ডা লাগাতেই উঠে পরলাম, খাওয়ার সময় মা কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলছে আগামীকাল কি খাবি, বাড়ীতে আর একটাও চাল নাই। আমি শুনেও না শুনার মতো করে শুয়ে পরলাম। কিন্তু ভাবনা থেকে দুর হতে পারলামনা। মনে মনে ভাবছিলাম শহিদুল্লাহ সাহেবের রেশন দোকানের চাল কেরানী কেরামত ও কয়াল সুনিলের বিনে পয়সার চাল ও বাজারের দাদার দোকানের আলুতো আছেই, সকাল সকাল মাকে এনে দিয়েই চলে যাবো অসমাপ্ত কিছু সামাজিক কাজের জন্য, দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমাদের চিন্তা কি। এখনতো আর কাম-কাজ করতে হবে না, সরকার নাকি বিনে পয়সায় চাল-ডাল সবি ঘরে ঘরে পৌচিয়ে দিবে। ঘুম আসতে দেরি করলোনা। সকালে ঘুম থেকে উঠেই পরিকল্পনা মতো রেশন দোকানের সামনে দ্বারালাম। আমি ছাড়া আর কোনো মানুষ না থাকায় মনে মনে একটু খুসীই হলাম। দোকান খুললেই চাল নিয়ে বাড়ী যাবো। অনেক সময় পার হতেও দোকান খুলছে না, অনেকেই আমার সামনে দিয়ে বাজার করে চলে যাচ্ছে, আমি বসেই আছি, আর একজন মানুষও নাই রেশন দোকানের সামনে। কি করে থাকবে, আমারমত চলাক মানুষ থাকলেতো।বোকামি কাকে বলে, মনে পরলে কিছু লাল হয়ে যাই। কিছুটা বিরক্ত হয়েই আশে পাশের দোকান দারদের জিগ্যেস করলাম, দোকান কখন খুলবে। এমন সময় সুনিল বাজারে যাচ্ছে, তাকে থামিয়ে বললাম দাদা দোকান কখন খুলবেন, চাল লাগবে। সুনিল, চাল বাজার থেকে কিনে নাও। রেশন দোকান আর খুলবেনা সরকার গঠন না করা পর্যন্ত। দাদাকে বললাম আমার কাছে টাকা নাই, বাজার থেকে চাল কিনবো কি করে। সুনিলের কাছে এর উত্তর নাই, মুখটা ফেকাসে করে চলে গেলেন। বাজারে গিয়ে দাদাকে পেলাম দোকান পরিস্কার করছে। আমাকে দেখেই কিছু চাল,আলু ও তরিতরকারি হাতে দিয়ে বাড়ী যেতে বললেন। আগেই বাজার করে রেখেছিলেন, আমাকে দেখে দাদা খুসীই হয়েছেন সহায়তার জন্য। আমি আর দেরি না করে এক দৌড়ে বাড়ীতে, মাকে বুজিয়ে দিয়ে আর এক দৌড়ে। খালপারে গিয়েই থমকে দ্বারালাম,বর্তমান বাচ্চু ভাই এর বাড়ীটা যেখানে।পথ হারা দুই অবাঙালী হালকা মেশিনগান হাতে গুলি করতে করতে এগিয়ে আসছে।সম্ভবত কাটাসুর দিয়েই বাঙালীদের তারা খেয়ে দিগবিদিক হয়ে পরেছে,টানে উঠতে পারছেনা। আমরাও খালি হাতে ওদের কাছে যাইতে পারছিনা। অনেক মানুষ জরো হয়েছে, ভয়েও আছে। খবর পেয়ে একদল মুক্তিবাহিনী ও সপহ্ম ত্যাগী এলাকার পরিচিত মুখ রাজাকারা এসে হাজির। সবার হাতেই অস্ত্র। কেউ আর সামনে যেতে সাহস পাচ্ছে না, পজেশন নিতেই ব্যাস্ত।হালকা মেশিনগান হাতে নিয়ে যুবক দুই জনই আমাদের দিকে মুখ ও মেশিনগানের নল উচু করে হামকি দুমকি দিচ্ছে।তাদের একটাই কথা, হামকু যানেদাও, আপলোগোকো কুসনেহি হগা। হটাৎ একটা গুলি এসে এক যুবকের বুকে লাগলো, মুহূর্তে মাটিতে লুটিয়ে পরতেই আর একটা বধ্যভুমির দিকে দৌড় দিলো, শত শত মানুষের মাঝে যা হবার ছিলো, তাই হলো। এই দুইটার লাশ নিয়ে আনন্দ মিছিল। মানুষের মন থেকে ডরভয় মায়া মমতা বলতে কিছু নাই বললেই চলে। আমার মনেও এদের জন্য একটুও আফসোস হলো না। বধ্যভুমিতে আসতে দেরি হওয়ার জন্য আমার নাস্তাটাও খাওয়া হয় নাই, সে খবর কেউ জিগ্যেস করলো না।জনসমাগম যাই ছিল, অবাঙালী হত্যার পরে হাজার হাজার মানুষ দেখতে আসছে। লোকেলোকান্য বধ্যভুমি। বিদেশি সাংবাদিক, নাগরীক ও কুটনৈতিক পাড়ায় লোকজনের আগমন ঘটছে উল্লেখ্য করার মত। চলবে দশম ১০ পর্ব নিয়ে আসবো।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামলী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।