জনাব রবিউল আলমঃ সবাইকে বলে রেখে ছিলাম, ভোরেই ঘুম থেকে উঠলাম। চুপিশারে পাতিল থেকে পান্তা ভাত খেয়েই ছুট। রায়ের বাজার বদ্ধভুমিতে গিয়ে একঝাঁক কুকুরের সন্দান পেলাম। একা হওয়াতে ভয় লাগছে কুকুরকে কিছু বলতে। কুকুরগুলোও আমাকে দেখে গেও গেও করছে। মনকে মানাতে পারছিনা মানুষের লাশ কুকুর টেনেটুনে খাচ্ছে। এমন সময় এক দুই করে লোকজন আসছে। আমার সাথের দুইজনও এসে পরেছে। খোলায় ইটের অভাব নাই। আমি একটা ইট হাতে নিতেই কুকুর আবারও গেও গেও করে উঠলো। মনে হয় ওরা ভাবছে, ওদের ভাগের আমি অংশ নিতে চাচ্ছি। দুর্গন্ধ কম হয়েছে, না আমার শরিলের দুর্গন্ধই আমাকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে, বুঝতে পারছিলামনা। হাতের ইটাটা স্ব জড়ে কুকুরগুলো দিকে ছুরে মারলাম। একটু গেও করেই ভাবটা এমন, আজ কুকুরের রাজ্যে আমরা প্রবেশ করেছি। লোকজনের সংখ্যা বারাতে, সবাই মিলে একটি করে ইটা নিলাম হাতে। একসাথে তারা করায় কুকুর সাম্রাজ্যের অবসান হলো। তারপরেও দুরে দ্বারিয়ে গেও গেওচলছে, থামানো যাচ্ছে না। কুকুর সরে যাওয়াতে মানুষ তাদের স্বজনদের লাশ খুঁজা শুরু করলো। আমরাও চারজন চারিদিকে ঘুরেঘুরে দেখছিলাম। এমন সময় অনেকে লোক একজন লোকের পিছুপিছু দৌড়াচ্ছে। কৌতূহল নিয়ে আমরাও গেলাম। কাছে গিয়ে দেখলাম খালেক রাজাকারকে দরে আনা হয়েছে, সাথে তার শাশুড়ী কারো হাতে, কারো পায়ে দরেই চলেছে। বিলাপ করে কানছে আর বলছে, আমার মেয়েটার কি হবে। তোমার আমার জামাইটারে ছাইরা দাও। মাঝে মাঝে ওরে বাবারে বলে চিক্কার করে উঠছে। কিছুখনের মধ্যেই ইণ্ডিয়ান অস্ত্র দিয়ে মুক্তিবাহিনী দুই হাতে দুই পায়ের মাঝামাঝি চার রাওন গুলি করলেন। হাত পা ভেঙ্গে পরে আছে রাজাকার খালেকের দেহ। প্রথমে রক্ত অনেক জোরে প্রবাহিত হলেও আস্তে আস্তে এখন আর রক্ত ঝড়ছে না। শাশুড়ী ইটা বানানো মাটির টিলার উপর বসে করুন দৃষ্টিতে জামাইকে দেখছে। জামাই রাজাকার খালেকও বড় বড় চোখে চারিদিকে দ্বারিয়ে থাকা লোকজনকে ও শাশুড়ীর দিকে দেখছে।মুখে কোনো কথা বলতে পারছেনা একঘন্টা হয়ে গেলো খালেকের দম বন্ধ হচ্ছে না, মুক্তিযোদ্ধাদের তারা থাকায় বুকে মাঝে বেনেট ডুকিয়ে দিলো। মুহুর্তে খালেকে জবনিকা সলিল সমাধি। আমাদের অঙ্গিকার মনে হওয়াতেই আবারো বুদ্ধিজীবীদের লাশের কাছে হাজির হলাম। আজ আর লাশ নিয়ে টানাটানি কম। খুঁজাখুঁজি বেশী হচ্ছে। দুই-চারটি লাশ যাও সনাক্ত হচ্ছে, আত্নীয় সজনরাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা করছেন। লোক সমাগম আগেরদিনের চেয়ে বেশী। অনেক লাশ বিকৃত হয়ে পরেছে। অনেক পুরনো লাশ চিনা যাচ্ছে না। ৮ ডিসেম্বর থেকেই মানুষ হত্যা করা শুরু হয়েছিল। অনেক লাশ মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে কোনো ক্যামেরা নাই। লাশ নিতে আসা কারো কাছেই ক্যামেরা ছিলো না। রায়ের বাজার বদ্ধভুমির লাশের প্রকৃতচিত্র বাঙালি জাতিকে ও বিশ্ববাসীকে দেখাতে পারলামনা। যে ছবি রায়ের বাজার বদ্ধভুমির দেখানো হচ্ছে, চার থেকে পাচটা লাশের। তার ১৭ ডিসেম্বর বিকালের ছবি। ভারতীয় ও রয়েটার এবং বিদেশি কিছু সাংবাদিকের সংগ্রহ।চলবে নবম ৯ পর্ব নিয়ে আসবো।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামলী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।