আমার দেখা রায়ের বাজার বদ্ধভুমির পুর্ণাঙ্গ হলো না বুদ্ধিজীবীদের রক্তে ভেজা বটগাছ সংরক্ষণের অভাবে
Reporter Name
Update Time :
Sunday, December 20, 2020
294 Time View
চুয়াল্লিশ ৪৪ পর্ব
জনাব রবিউল আলমঃ জীবন তো আার থেমে থাকবেনা। দোকানে গেলাম, বছিলা থেকে একজন কাষ্টমার এসেছে, তার বড় ভাইএর ছেলের বিয়েতে মাংস দিতে হবে। মামু তাকে আগে থেকেই জান্ত। আমিও তাকে চিনি। নাম মনে করতে পারছিনা লেখার সময়। বাজারে মাছ বিক্রি করতো, তারা দুই ভাই, স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন সময়ে বড় ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছে। এ এক আজব হত্যাকাণ্ড, বড় ভাই মাছ বিক্রি করে বাজার সদাই নিয়ে বাড়ী যাচ্ছিলেন। বর্তমান রায়ের বাজার খেলার মাঠ বড় পুশকুনি ছিল, ছিল সান বাধানো ঘাট। আমরা এই ঘাটের পারে বসে অনেক খেলা করেছি গোসল করার আগে।বিকাল হলে লোকে লোকারণ্য হয়ে যেতো ঘাটে বসে আনন্দ উপভোগ্য করতে ও আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য। পুশকুনিটি খালের সাথে যুক্ত ছিলো। পাল সমিতির সব জায়গা জমি লুটেপুটে খাওয়া হয়েছে, এমনকি বাজারের পুশকুনিটাও। কিন্তু এই পুশকুনিটা আলহাজ্ব মোঃ সাদেক খান এমপির জন্যই খেলার মাঠে পরিনত হয়েছে,লুট থেকে রহ্মা পেয়েছে, ততকালীন কমিশনারের দায়ীত্বে থাকার জন্যে। এই পুশকুনির পারেই এক দল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বসেছিলেন বৈকালী হাওয়া উপভোগের জন্য, পুশকুনি থেকে বছিলা পর্যন্ত একটি গাছও ছিলোনা, অনেক দুর পর্যন্ত পরিস্কার দেখা যেতো। সেনারা একে অন্যের সাথে কথা বলছে, অস্ত্র নিয়ে খেলার করছে। লেন্সারযুক্ত একটি অস্ত্র মুহুর্তে বছিলার দিকে তাক করানো হলো। টিগার টিপতেই পাখির মতো পরে গেল ঐ লোকটা। পরে জেনেছি বছিলার মাছওয়ালা, এই মানুষটার
বড় ভাই ছিল। সেই বড় ভাই এর ছেলের বিয়ের মাংসের জন্য আজ এসেছেন দির্ঘদিন পর। এখানে বলে রাখতে হবে বছিলার লোকজন শনিবার মঙ্গলবার রায়ের বাজার হাটে, মঙ্গলবার আটির বাজার, বুধবার মিরপুর বড় বাজার ছাড়া হাট বাজার করতে পারতোনা। বায়ের বাজার থেকে বাজার করে খালের পার দিয়ে হেটে বড় খালের পার, যেখানে এখন সাদেক খানের ঘাট। এখন শাকু পার হয়, তখন নৌকা পার হতে হয়েছে।রায়ের বাজার থেকে পশ্চিম দিকে তাকালে বছিলা পর্যন্ত পরিস্কার দেখা যেতো। লোকটাকে হত্যা করা হয়েছি এখন রায়ের বাজার থেকে বেড়ীবাঁধে উঠার পথে। হাসতে হাসতে, বিনা কারনেও মানুষ মারতে পারতেন পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাই কঠিন ছিল। ওরা মুসলমান, মানুষ হত্যা অনেক পরের প্রশ্ন, জীব হত্যা মহাপাপ এই সাধারণ জ্ঞান ও ঐ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছে ছিলোনা।পৃথিবীর কোন জাতি স্বাধীনতার জন্য এত রক্ত, এত নির্যাতন, এত অত্যাচার, ত্যাগ তিতিহ্মার প্রয়োজন হয়েছিলো কি না, আমার জানা নাই। পোড়া মাটির স্বাধীনতা রেখে গেছে আমাদের জন্য। মনকে একটি স্থানের রাখতেই পারছিলামনা। বুদ্ধিজীবীদের লাশ, রাস্তায় পরে থাকা লাশ, মানুষের কঙ্কাল, মাথার খুলি আমাকে মানুষিক যন্ত্রণাদেয় তখনো, এখনো।স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে হাবিবউল্লাহ চাচা সাথে গাবতলী গরুর হাটে গিয়েছিলাম। লালকুঠি রোডের সেই আগের গাবতলীতে। গরু কিনতে রাত হয়ে যাওয়াতে, চাচা আমাকে রেখে চলে আসে। সকালে গরু নিয়ে আসবো। রাতে অনেক শিত পরাতে ঘুম আসছে না, একেতো মোশার কামর, অন্যদিকে পচণ্ড শিত। যাওয়ার সময় বাড়ী থেকে অতিরিক্ত কাপরও নেওয়া হয় নাই। আমরা তিন চারজন থাকাতে বর্তমান এশিয়া সিনেমা হলের মাঠে যাত্রা দেখে রাত কাটানো হবে, বুদ্ধি করা হলো। আগে শিতের সময় সেই মাঠে নিয়মিত যাত্রা, সার্কাস ও নাটক, জারিগানের পালা হতো।শুরু হলো টাকার হিসেব, কার কাছে কি আছে। আমার কাছে বারো আনা থাকলেও আটআনা হিসেব দিলাম। চাচা খাওয়ার জন্য এক টাকা দিলেও চারআনা খেয়েছিলাম। একজন স্বীকার করলোনা তার কাছে কোন পয়সা আছে। তিনজনে মিলে ওকে চার আনা দিলাম, তুই গরুর কাছে থাক। যাত্রা আরো আগেই শুরু হয়ে গেছে। আমাদের উদ্দেশ্য যাত্রা দেখা নয়, সময় কাটানো। টিকিট কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে। গেটম্যানের সাথে আঁট আনায় চুক্তি হলো, ভিতরে বসে যাত্রা দেখবো তিনজন। যাত্রা চলছে, আমরাও ভিতরে প্রবেশ করেছি মাত্র। লালকুঠিতে অবাঙালীরা আক্রমণ করেছে। লোকজনের দৌড়াদৌড়িতে যাত্রাপালা বন্ধ হয়ে গেলো। তখন এশিয়া হলে রাস্তা, টেকনিক্যাল থেকে মিরপুর এক নম্বর যাওয়া রাস্তাটা হয় নাই। গাবতলী লালকুঠি, মাজার হয়ে মিরপুর চিরিয়াখানার রোড দিয়ে গাড়ী চলাচল করতো মিরপুর ১২ নম্বর টু চকবাজার। পরিস্থিতি কিছুটা ঠাণ্ডা হলে আমরা গরু কাছে আসি। খবর পেলাম দুই জন অবাঙালীকে হত্যা করা হয়েছে, অতকৃতে হামলা করার অপরাধে। সরকার পাকিস্তানী, নিহত দুইজন অবাঙালী। কিছু সময় পর দুইদিক থেকেই পুলিশের গাড়ী গুলি করতে করতে ভিতরে প্রবেশ করছে। রাস্তা জন শুন্য হয়ে পরলো। হাটের ভিতরে স্কুল ঘরে বসে পুলিশের গাড়ী দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নাই ছিলোনা আমাদের। চলবে ৪৫ পর্বে।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামলী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।