আটাশ ২৮ পর্ব
জনাব রবিউল আলমঃ আমাকে ঘুড়ী ও টুকরী নিয়ে নিচে যেতে দেখেই অনেকের চোখ কপালে উঠলো। গোবর নিয়েও টানাটানি চলছে আগে বুঝতে পারিনি। দেশে খাদ্যঘার্তি পাশাপাশি জ্বালানীর জন্য গোবর কতটা তিব্র চাহিদা,বুঝতে পারলাম টুকরী এনে। শাওকত ভাই-এর মা, মোহাম্মদ হোসেন খোকনের দাদী সাদেক খান ও হোসেন সাহেবেদের খোলার সব গোবর নিয়ে যায়। মাঠে যে গরু চরে, সেই গোবর নিয়েও টানাটানি করে। আরো অনেকের ছেলে মেয়ে গোবরের আশায় গরুর পেছনে পেছনে দ্বারিয়ে থাকে, আমার জমিদারি স্টাইলে ঘুড়ি উড়ানো, গুলি খেলার গোবর টুকানো হচ্ছে না। গোবর পরে থাকাতো দুরের কথা, মাটিতে পরতেই পারে না।সবাই চলে যাওয়ার পরে গরু নিয়ে বাড়ী যাওয়ার সময় গরু গুলো দয়া করে কিছুটা গোবর আমার জন্য রেখে গেলো।আমি মায়ের মাইরের ভয়ে সেই গোবর টুকু কুড়িয়ে বাড়ী আসলাম।পরেরদিন মনা জমিদারদের বাড়ী থেকে খালেক ভাই অনেক গরু নিয়ে মাঠে আসলো।আমাকে অনেক আদর করতো খালেক ভাই, ময়না খান, জমিদার নিজেও। রায়ের বাজার ও ঘাটের ইজারদার ছিলো তারা। জমিদারের অনেক খাজনা উঠিয়ে দিয়েছি, বাজার সদাই নিয়ে বাড়ীতে গিয়েছি। জমিরদার বাড়ীর নারী থেকে পুরুষ সবাই আমাকে চেনে, আদরও করতো। খালেক ভাইকে বললাম আমাকে গোবর নিতে হবে। কাম-কাজ নাই। খালেক আর আমি বসে আছি। গরু লেঙ্গুর উঠালেই দৌড়। অন্য কারো খালেকের গরুর কাছেই আসতে নিষেধ করে দিলো। খোকনের দাদীর অভিযোগ, তোমরা আমাগো আত্নীয়, রবিউল্লা কি হয় ? খোকনের দাদীর অনেক গোবর। সারাদিন টুকানোর পরে কোনদিন একা নিতে পারতোনা। শাওকত ভাই সন্ধ্যার পরে এসে মায় পোলায় মিলেই বটগাছের নিচে নিয়ে মুঠো দিতো, পাল বাড়ীতে বিক্রি করতো।একটি দুধের গরুও পালতো। খালেক ভাই, তোমার তো অনেক হয়েছে, হয়ও। মামুগো খোলার এই খোলার সব গোবর তো তুমিই নাও। আজ অনেক গোবর হওয়াতে বড় ভাই সফিউল্লাহ কে ডাকতে গেলাম। গোবরের কথা শুনেই বাড়ী থেকে পলাইছে। আমার দুইজনের ছোট ভাই আবুল হোসেনকে নিয়ে গেলাম। অনেক কষ্টে আনা হলো। মুটঠি দিয়ে শুরু হলো গোবরের ব্যবসা। বেশীদিন করতে পারিনি। মা, তোর গোবরের পয়সায় সংসার চলে না, অভ্যাশ ও পরিবর্তন হইয়া যাইবো। কিছু একটা কামকাজ করতে হবে। আমারও ভালো লাগে না গোবর টুকাতে। কি করবো, অভাব ছাড়ছে না, দাদার ও অনেক বয়স হয়ে গেছে। দোকানও ভালো ভাবে করতে পারছেনা। অনেক ভাবনার পরে মোহাম্মদপুর স্টানে মঙ্গলের সাথে ট্রাকের হেলপারের কাজে লাগলাম। কিছুদিনেই আমার চাকরী শেষ চুপিচুপি গাড়ী স্টাষ্ট দেওয়া অপরাধে। বর্তমান আল্লা করিম মসজিদের স্থানে বাদল খলিফা ও আমি দোকান করতে ছিলাম। কোথাও টিকে থাকার অবস্থা নেই। নেই পেটের খিধা নিবারন করার মত কোনো কর্ম। বাড়ীতে ভাত খাচ্ছিলাম। বস্তা মাথায়, পাল্লা হাতে ফেরিওলার ডাক। গম আছে গম, হাক-ডাক। মা ঘরে থাকা রেশনে গম ও চিনি বিক্রি করলো। আমার মাথায় ও নতুন করে পরিকল্পনা এলো গম চিনি কিনে ব্যবসা করবো। চলবে ২৯ পর্বে।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামলী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।