ছাব্বিশ ২৬ পর্ব
জনাব রবিউল আলমঃ প্রতিদিন দুই তিন বার করে দোকানে এসে খবর নিতো ঠাকুর, সাংবাদিকরা কবে আসবে। পরেরদিন ৫ জানুয়ারী সকালে দোকানে এসেই দেখি লাবু, দুঃখু বেরাইত থেকে এসে কাজে যাগদান করেছে। আমার শশুর জয়নাল মহাজন, কানা জামালকে মিরপুর থেকে কাজে আনছে। ১০ টার সময় হাবিবুল্লাহ মহাজন দোকানে এসেই এক চোখ কানা জামালকে মারতে মারতে জয়নাল মহাজনের দোকান থেকে নামিয়েও মারতে থাকলো অবাঙালী হওয়াতে। অনেক মানুষ জমায়েত হয়ে গেলো। নাজিমুদ্দিনের বাবা মুদি দোকানদার, বয়স্ক হওয়াতে মাঝখানে দ্বারিয়ে মাইর থামালো। আমরা সবাই দ্বারিয়ে আছি। জালাল পরে আছে। কিছু সময় পর জালালের বৌ, শাশুড়ী, ছেলে মেয়ে কান্তে কান্তে এসে হাজির হলো। সবার হাতে পায় ধরছে। এই বেটা বিহার থেকে আইছে বলেই বিহারী। আমরা সবাইতো বাঙালী। ওরে মাইরা ফালান। আমাগো কি করবেন আগে কইয়ালন। মেয়ে ও ছেলেটা অনেক সুন্দর, চোখের দিকে তাকালে পাথরেরও মন গলে যাবে। হাবিবউল্লাহ চাচা অনেক রাগী হলেও পলকেই মন নরম হয়ে যেতো। আজও তাই হলো। বাচ্চা দুইটা তার পায়ে পরতেই দুই হাত দিয়ে উঠিয়ে, আমাকে ডাক্তার আনতে বললো। এ সময় ডাক্তার পাওয়া যাবে না। মেডিকেল ও নেওয়া যাবে না অবাঙালী বলে। রাস্তাতো আর হাবিবুল্লাহ চাচারা নাই, মাউরা পাইলে ছাইড়া দিবো না। কি আর করা। জামালের বৌয়ের হাতে ২০ টাকা দিয়ে একটা রিকসায় উঠিয়ে দিলো জালালকে। বিকালে ডাক্তার পাইলে চিকিৎসা করা হবে। ডাক্তার দোকান খোলা পাইলে ঔষধ নিয়ে যাবে। সুস্থ হলে কাজে আসবে। পরেরদিন ও হাবিবউল্লাহ চাচা খোজ খবর নিয়েছে। অনেক বাজার সাদাই করে দিয়েছে।সুস্থ হয়ে ৩৮ বছর রায়ের বাজারেই কাজ করেছে জামাল। রায়ের বাজার মসজিদের নিয়মিত মুসল্লী ছিলো। হাইস্কুলের পেছনে ছিলো বাড়ী। জামালের জন্ম বিহারের জমিদার ব্রামনের ঘরে, একচোখ কানা হওয়াতে হত্যা করে ফেলে দেওয়ার হুকুম দেওয়া হলো। মা কি আর নিজ হাতে সন্তান হত্যা করতে পারে। একটি চাকু রেলগাড়ীর বাথরুমে জামালকে সুইয়ে রেখে চলে আসে। গাড়ী চলেই কেটে দুইভাগ হয়ে যাবে। হায়াৎতের মালিক আল্লা। গাড়ী ছাড়ার আগে টিটি গাড়ী চেক করার সময় বাচ্চার চিক্কার শুনতে পান। বাথরুম থেকে জামালকে উদ্ধার করে হাসপাতেলে নিয়ে যান। টিটির কোনো সন্তান না থাকায় ১২ বছর লালন পালন করার পরে ব্রাম্মন জামালের আসল পিতা মামলা করেন পিতৃত্বের দাবীতে। ৫ বছর মামলা চলার পরে, জামালের আসল পিতার পহ্মে রায় দেন। তবে পালক পিতার চাহিদা পুরন করতে হবে। ততকালীন সময় প্রতিদিন ২০ টাকা তার ভরন-পোষন দাবী করা হয়। ১৫ টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি হওয়ার পরেও আপোষ করা হয় নাই। টাকার চেয়ে সন্তান বড়, প্রমান করেছেন পালক পিতা। হটাৎ তার মৃত্যু হলে কিছুই জামালকে লেখে দিয়ে যেতে পারেন নাই। এক মাসের মধ্যে তার পালক মায়েও মৃত্যু হওয়াতে চাচাতো ভাই এরা লাশরিক হওয়ায় বাড়ী থেকে বের করেদেন। মনের কষ্টে দেশ ছেড়ে, দেশান্তরী হন। বাংলাদেশ আসার পরে কাঠাল বাগান বাজারের মাংস ব্যবসায়ী আঃ জব্বার মিয়া, বর্তমান মাংস ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি আঃ বারেকের পিতা তিনি, নিজ সন্তানের মতই লালন পালন করেন এবং বিয়ে করিয়েদেন। একের পর এক সন্তান জন্মগ্রহণ করলেও জামালের কোনো সন্তানই স্থায়ীত্ব হয় নাই। আরমান ছবি দেখে তার একটি ছেলের নাম রাখা হয় আরমান। সেই ছেলের মৃত্যু পরে লে আয়া ফের কাহাপার, ইয়েতো ঐহি যায়গা হায় গান শুনলেই জামাল কান্নায় ভেঙে পরতো। আমি না জেনেই তার সামনে এই গানটা গাওয়ার অপরাধে, তার কান্না শুনতে হয়েছে। অব শেষে একটি মেয়ে পালক নিতে হয়। তার পরেই একটি পুত্র সন্তান আল্লাপাক দান করেন। যাকে জামাল বিয়ে করিয়ে নাতি দেখে যান। কানা জামালকে চিনেন না, ভালোবাসেন নাই এমন লোক রায়ের বাজারে কমই ছিলো। তার সাথে আমার জীবনের অনেক স্মৃতি জরিত। আল্লাপাক তাকে জান্নাতি করুন। চলবে ২৭ পর্ব নিয়ে।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামলী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।