পঁচিশ ২৫ পর্ব
জনাব রবিউল আলমঃ ঠাকুরকে বললাম, দাদা চলো মন্দিরে গিয়ে বসি। তোমার সাথে কিছু কথা আছে। কালো একটা পইতা গাড় থেকে পেটের অংশ নিয়ে জরানো, মানুষটা কিছু খাটো, তার চেয়ে খাটো হয়েই হাটতেন। পেটটা জন্য খালি গায় গামছা নিয়েই বেশী হাঁটাচলা করতেন। আবে, আমার লগে আয়। বাজার থেকে কিছু পরস্বাদের জন্য ফলমুল কিনে কাটার জন্য দিয়ে ঠাকুর বরাবর বসলো। আমি তার পাশে বসেই জান্তে চাইলাম। তোমাকে আমার সামনেই পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে গেলো রাইফেলের বাট দিয়ে মারতে মারতে, গাড়ীতে উঠালো। কথায় নিয়ে গেলো এবং কি করে বেচে আসলা। আবে ভগমান চাইলে কি আর কোনো হালায় মারতে পারে। কাটাসুর রাজাকার ক্যাম্পে নেওয়া পরে চোখ খুলতেই আমার এক বন্ধুকে দেখতে পাইলাম, বিহারে ছোট বেলা একসাথেই লেখা পড়া করছি। আমাগো পাশের বাড়ী, একলগে স্কুলে যাইতাম। আরশাদ খান, দেশ ভাগ হলে পাকিস্তানে চলে যায়। সেনাবাহিনীর অনেক বড় অফিসার। প্রথম দেইখা চিনতে পারে নাই হালায়। নাম ঠিকানা লেখার সময় আমার মুখের দিকে তাকাইয়া আছে। কতহ্মন পর হালায় চেয়ার থাইকা উঠাই বুকে টাইনা লইলো। একটা চিক্কার দিয়া কইলো, আমকো পাচান্ত নেই। আবে হাম আরশাদ খান। তেরা দোশ। আমি হালায় অভাগ। সব লেখালেখি থুয়া, আমারে লইয়া ভিতরে গেলো। ওগো হালাল ডাক্তর আছে, তারাতাড়ী ডাক্তার আনলো, একটা সুই দিতেই শরিলের ব্যাথা কইমা গেলো। সব কাম ফালাইয়া হালায় আমারে লইয়াই ব্যাস্ত। দুপুরে অনেক ভালো ভালো খাওন আনতো। এই ফাকে জমির পুলিশ আইছে। জমিরের বাড়ীও বিহারে, আমারে চিনতো। ঐ হালায়ও আমারে দেইখা চেইতা গেলো। কোন মাদারচোদ ইস্কু লে আয়া আয়। কোনো হালায় রাজাকার শিকার করলোনা। আসলে আমারে কোনো রাজাকারা আনেই নাই। আলবদর ও সেনাবাহিনীর গাড়ী ছিলো। ওরা হালায় আমারে এইখানে দিয়া চইলা গেছে। আমার মাইরের যায়গাটা দেইখা আরশাদ খানের চোখে পানি দেখতে পাইলাম। জীবনের অনেক কথা মনে পইরা গেলো। আরশাদ আর আমি মাছ ধরতাম, গুড়ি উড়াতাম, গরু রাখতাম। একসাথে ঈদ ও পুঁজা করতাম। অনেক সময় এক সাথে, এক প্লেটেই খাইতাম। মায় আমারে আর আরশাদ কে কখনো দুই ভাবে দেখেই নাই। ওর মাও। আমারও চোখ দিয়ে পানি বারাইতাছে। জমির পুলিশ আর আরশাদ আমারে মন্দিরে আইনা দিয়া গেছে। এর পরে একটা হিন্দু ধইরা নেয় নাই। দেশটা স্বাধীন হওয়ার পরে আরশাদকে অনেক খুজার চেষ্টা করছি। পাই নাই। মনটা অনেক খারাপ। শুনতে শুনতে কখন আমার চোখ দিয়া পানি পরেছে বলতেই পারবোনা। কথা থামানোর জন্যই হয়তো টের পেয়েছি। জীবনের অনেক গল্পের সমাধান হতে পারতো, আমি ঠাকুরের কাছে আসলে। কে জান্ত। ঠাকুর দাদাকে বললাম, তোমার সাথে কিছু সাংবাদিক কথা বলতে চায়। তুমি যদি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলো, তবে হয়তো বন্দী শিবিরে আরশাদ খানের খরব নিতে পারবে। কথা শুনে ঠাকুর পাগলের মত হয়ে গেলো। আবে কালকে সকালেই লইয়া আয় না ভাই।আরো কত মিনতি, আমি লেখে বুঝাতে পারবোনা। কথাটা বলে আমি যে নতুন করে বিপদ ডেকে এনেছিলাম, পরে বুঝেছি। চলবে ২৬ পর্ব নিয়ে।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামলী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।