চব্বিশ ২৪ তম পর্ব
জনাব রবিউল আলমঃ কৌতূহল নিয়ে ভাঙ্গা পেকেটা খাওয়ার জন্য আমরা তিন চারজন রেডি। এমন সময় একজন বাধা দিলো। না-জেনে খাওয়া ঠিক হবে না। আমি বাধা উপেক্ষা করে আঙুল দিয়ে একটু চেটে দেখলাম। আজও নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারিনা স্বাদের কথা। ওদের অপেক্ষা না করেই আমি খাওয়া শুরু করলাম। একটা মাছ খেতেই পেকেটটা আমার হাত থেকে কেরে নেওয়া হলো। সবাই মিলে কারা কারি করেই অস্তির। কে খেয়েছে, কে খায় নাই বাছবিচার না করেই আমি দুইটা পেকেট নিয়ে বাড়ী চলে এলাম। মাছের পেকেট নিয়ে বাড়ীতে হৈ-হুল্লো লেখে বুঝানো যাবে না। একটা পেকেট মামার বাড়ীতে দেওয়া হলো। মামা হোসেন সাহেব সেনাবাহিনীতে চাকরির সুবাদে এই পেকেটের সাথে আগেই পরিচয় ছিলো। তাকে আর তেমন প্রতিক্রীয়া দেখলাম না। একান্তই অনইচ্ছা সত্যেও টেলিভিশনের সামনে বসলাম। মামীর কাছে আস্তে করে জান্তে চাইলাম, মামী আমার কোনো ফোন এসেছিল।মামী বললো আমি জানিনা, তোর বড় আপাকে জিগ্যেস কর। নিলা আপাই আমাদের বড় আপা, সেও বললো কোনো ফোন আসে নাই। মনটা রাখাপ করেই ঘরে এসে ঘুম। অনেক রাত পর্যন্ত ঘুম আসলোনা। কি হবে এই বেকার খাটনি খেটে, বেটারা হয়তো আর আসবেনা। সকালে দোকানে, কাজ শেষ করে পাশের দোকানের ভুইয়া সাহেব কাছে গিয়ে দ্বারালাম, কিছু বলতে সাহস হলো না। তার মনের দুঃখের কথা আমি জানি। দুইটি জোয়ান পোলা থাকতে এই বুড়ো বয়সে একাই দোকান চালাতে হয়, তাও আবার মাংসের দোকান। এই বয়সে গরু জবাই, চাপাতি দিয়ে মাংস কোপানোর মত পরিশ্রমের কাজ। তিনি নিজে থেকেই বললেন। আগামীকাল তোমার আজমল ভাই আসবে। আমি আজ কারো বাসায় যাবো না। রায়ের বাজার আঁকড়া মন্দিরে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মন্দিরের ঠাকুর ( পুজারী ) সাথে দেখা হয়ে গেলো। আমাকে অনেক আদর করতো। আকড়া মন্দীরের পেছনে খোলা যায়গায় বাথরুম ছিল। ঠাকুর কাপর খুলে, ঘটি নিয়ে সেই বাথরুমে যেতো। রায়ের ব্যবসায়ী সমিতির অফিস ছিল মন্দিরে পেছনে, বর্তমানে নাজমা ইলেকট্রনিকের দোকান। দোচালা অফিস ঘরের পেছনে খালী যায়গার আমরা অনেকেই খেলা করতাম অবসর সময়। মন্দিরের সাথেই আমাদের কাঁচা মালের দোকান ছিলো ১৯৬৩ সাল থেকে। ঠাকুরের বাড়ী বিহারে। আমরা আসামের, বাবার সাথে ইণ্ডিয়ান গল্প হতো। ঠাকুর বাথরুম গেলেই কালা রোয়াইল গাছে চাকা মারতো, ঠাকুর উঠেই অকাতরে গালিগালাজ করতো। কালা আনন্দ উপভোগ করতো। কালা সারাদিনই সমিতির অফিসের পেছনে থেকে গাজার নেশা করতো। ঠাকুর আর কালা ছিলো বাঘে নেঙ্গুর। কালাকে অনেকেই চেনেন না, দীর্ঘদিন আগেই মারা গেছে। কালার দোকানের পিয়াজ ও মিষ্টি এখনো মানুষ খাচ্ছেন নামে। আমি একদিন কালাকে ধরে ঠাকুরে কাছে হাজির করাতেই ঠাকুর আমার উপর ধারুন খুসী। মন্দিরে গেলেই ভালো ভালো মিষ্টি খেতে দিতো। রাস্তায় দেখা হওয়ার পরেই মনে হয়ে গেলো। শহিদুল্লাহ রেশন থেকা বিনে পয়সা চাল নেওয়ার দিন পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ঠাকুরকে মারতে মারতে গাড়ীতে উঠাচ্ছে। চালের বুঝা ও নিজেকে বাচানোর তারা থেকে পেছন ফিরে আর তাকানো হয় না। আজ জীবীত অবস্থায় আমার সামনে। রহস্য জানার আগ্রহটা ছারতে পারলামনা। চলবে, ২৫ পর্ব নিয়ে।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামলী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।