জনাব রবিউল আলমঃ আমি তাকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে বললাম,তিনি আমাকে বললো আমি সাংবাদিক পাবো কোথায় কে আমাকে সহায়তা করবে। আমি তাকে বললাম, আমার কাছে কিছু সাংবাদিক এসেছিল, তারা আপনার সাথে কথা বলতে চায়। আমার মনে হয় তাদের কাছে কিছুটা সহায়তা চাইলে, করতে পারেন। বেগম সাহেব দীর্ঘ একটা শ্বাস নিলেন। প্রথমদিন কান্না থামাতে পারিনি, আজ কথা থামাতে পারছিনা। মানুষের মনে কষ্ট ও অসহায়ত্ব দুর করার হ্মমতা আমার নাই, শুধু নিজের স্বার্থ রহ্মার জন্যই সেদিন সমাজ সেবক হয়েছিলাম এ সত্য অনুভব করেছি, প্রকাশ করতে পারিনি। বিদেশি সাংবাদিকদের এক হাজার টাকাই আমাকে লোভী ও সংগঠক বানিয়েছে। আজ বুঝতে পারছি, টাকাই জীবনের সব সমস্যা সমাধান করতে পারেনা, টাকা ছাড়া চলেও না। তবে বিবেচনার বিষয় কত ? প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকাই মানুষের বিপদের কারন হয়ে পরে।এ জীবনে অনেক টাকাওলা মানুষ দেখেছি শান্তি বিহীন জীবন যাপন করতে। বেগম সাহেব বেতন সহ শহিদ পরিবার হিসেবে অনেক টাকা পেয়েছিলেন, ছাতার মসজিদ লেনে মোঃ আলীদের কাছ থেকে জমি কিনে বাড়ী করে আছে, কারো কোন সহায়তার প্রয়োজন হয় নাই। পরের দিন গফুর সাহেবের ভাই দিল মোহাম্মদ দিলুর কাছে যাই হাইস্কুলের পেছনে, রায়ের বাজার ক্লাবের সামনে বাড়ীতে। দিলু বির মুক্তিযোদ্ধা ছিলো, মুক্তির সংগ্রামে অগ্রভাগেই লড়াই করেছে ৮ মাস। একটু দেরিতে ভারতে গিয়েছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা গোপনে ঢাকায় প্রবেশ করেছিল, ঢাকা আক্রমনের জন্য। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আত্নসমর্পণের জন্য আর ঢাকা আক্রমণ করতে হয় নাই। উল্টো জীবন দিতে হয়ে রাজাকার আলবদর বাহিনীর হাতে, তাদের মাঝে রায়ের বাজার থেকে হারিজ, সিদ্দিক। মুক্তিযোদ্ধা রতন ভাই ফজলু কন্টেকটারের বড় ছেলেরের কাছ থেকে জান্তে পারি। অনেকখন বসে থাকার পরেও দিলু ভাই আমার সাথে কোনো কথা বললো না। স্বাধীনতার আগে ১৫ নম্বরে মাংসের দোকানে কাজ করার সময়ও আমার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো না। স্বাধীনতার পরে নিজেই মাংসের দোকান দিয়েছিলাম, তখনো তার ব্যবহারে আমি অতিষ্ঠ ছিলাম। আল্লাপাক জান্নাতি করুন। একজন মুক্তিযোদ্ধা জাতির শ্রেষ্ট সন্তান হিসেবে আমি তাকে সম্মান করতাম। বিগত চার দিন কাজের ফাকে ফাকে মুক্তিযোদ্ধা, সজন হারা, আহত নিহতদের তালিকা ও ঠিকানা অনেক যোগার করেছি। চারদিনে সাংবাদিকদের একটা ফোনও আসে নাই। এখন আর টেলিভিশনের সামনে বসতে, দেখতে ভালো লাগে না, প্রামান্যচিত্র দেখতে না পারার জন্য। কিছুটা হতাশ হচ্ছি, তবু তাদের আশায় আশায় নিজের অভিজ্ঞতার জুলি কতটা মজবুত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধহত, বুদ্ধিজীবী, স্মৃতিশৌদ বটগাছের গুরুত্ব, রাজাকার, আলবদর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী সম্পর্কে। পরেরদিন ২ কি ৩ জানুয়ারী দোকানের কাজ শেষ করে ফিজিক্যাল কলেজ পরিদর্শন করতে গেলাম, হোস্টেল বিল্ডিং এ নিচ তলায় চাল-ডাল সবজি পচা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, ভালো কোনো জিনিস নেই, একটি চেয়ার-টেবিল ও।এমন ভাবে লুটপাট হয়েছে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাই কঠিন। দোতলার পুরো অংশ আর দেখার প্রয়োজন হলো না, দেখতে মন চাইলোও না। দোতলায় শোয়ার ব্যবস্তা ছিলো, প্রতিটি থানায় যেমন বিছনা থাকে। প্রতিটা চকিই ভেঙ্গে -চুরে একাকার, বিছানা গুলতে আগুন লাগানো হয়েছে। তিন তলায় থোকা থোকা রক্ত জমাট হয়ে শুকিয়ে আছে। মনে হয় যাওয়ার আগে বন্দীদের হত্যা করা হয়েছে। আমি নিজেই এই তিন তলা থেকে একটি লাশ নিয়ে গিয়েছিলাম। রক্তের পরিমান দেখে মনে হয় আরো মানুষ হত্যা করেছিল। ১৬ ডিসেম্বর এতোটা ভালো করে দেখা হয় নাই। অপরদিকে বিল্ডিং এ গিয়ে দেখি অস্ত্র ও গুলির খালি বাক্স গুলো পরে আছে, সাথে কিছু অন্য পেকেট। কিছু ভাঙ্গা, দুই চারটা ভালো পেকেট আছে। একটা পেকেট ভেঙ্গে দেখলাম মাছ। এই মাছের পেকেটগুলো খান্নার প্রয়োজন হয় না। টিন কেটে ভাত-রুটি দিয়ে খাওয়া যায়। চলবে ২৪ পর্ব নিয়ে আসবো।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামলী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।