জনাব রবিউল আলমঃ মিছিল আর শেষ হতে চায় না। আমার ঠেলা গাড়ীর নৌকার দুই পাশে রমিজ ভাই ও নাসিরউল্লাহ সাহেব দ্বারিয়ে আছেন। মিছিল শেষ হওয়াতে বঙ্গবন্ধু আমাকে নিয়ে বাড়ীর ভিতরে আসতে বললেন নাসিরউল্লাহ সাহেবকে। আমার শরিলের নাচ মনের আনন্দ ও হুক্কার টান থামাতে পারছিনা। নিচের রুমে অনেক জাতিয় নেতা, বেগম মজিব কি কারনে রুমে এসেছেন। বঙ্গবন্ধু বেগম মজিবকে এক গ্লাস দুধ দিতে বললেন, আমাকে। আমি কিছুতেই দুধ খাবো না। অনেক নেতা, অনেক কথা বললেন। আমাকে দুধ খাওয়াতে পারলেন না। একজন দমকের সুরে বলছেন, তোমার এত বড় সাহস নেতার কথাও রাখছ না। বঙ্গবন্ধু সবাইকে চুপ থাকতে বললো।ওর মুছ দাড়ি খুলেদে, দুধ এমনিতেই খাইবো, মুহুর্তে আমার মুছ ও দাড়ি নাই হয়ে গেলো, আমি কান্না শুরু করলাম, নেতা দুধ খেলে দাড়ি লাগানো হবে। আমি একটানে দুধ খেয়ে নিলাম। দাড়ি মুছ লেগে গেলো। নেতা, আরে তোরা নেতা হবি কেমনে,মানুষের মনের কথা বুঝোজ না। তখন না বুঝলেও এখন বঙ্গবন্ধু অভাব বুঝতে পারি। এমন মানব দরদী নেতা বাংলার আর আসবে না। বয়সটা ১৩ হলেও শরিলটার জন্য আমাকে বাচ্চাই মনে করতো, বঙ্গবন্ধু ও মনে করেছিলেন। এই সাংবাদিকদের দোষ কি। এখন আর বুদ্ধিজীবীদেরকে নিয়ে আমার কথা শুন্তেও চায় না, বিশ্বাসও করেন না, এখনো অনেক মানুষ আছে অবিশ্বাসের ঘন্টা বাজায় হীনমন্যতা থেকে । আমি বুদ্ধিজীবী থেকে বাড়ী আসলাম। পরের দিন সকালে যথারিতি কর্মময় জীবন মাংসের দোকানে,ভালোই চলছিলো। পাঁচ ছয়দিন, আমি ভুলেই যাচ্ছিলাম রায়ের বাজার বদ্ধভুমির কথা,বটগাছের কথা, বু্দ্ধিজীবীদের হত্যার কথা। সাড়ী সাড়ী মাটিতে পোতা লাশের কথা। নাকে আর দুর্গন্ধ লাগে না, মনে ভয় ও আতংক নাই। স্বাভাবিক জীবন যাপনে অবস্ত হয়ে পরেছি। প্রতিদিন কর্মময় জীবন শেষ করেই টেলিভিশনের সামনে বসে থাকি, আমার দেখানো ও আমাকে নিয়ে প্রামান্য চিত্র দেখার জন্য। এ জীবনে আমার আর দেখা হলো না। হয়তো পৃথিবীর অনেকেই দেখেছে। হয়তো দেখানোই হয় নাই। আমার ভাবনার জগতে বুদ্ধিজীবী হত্যার সাহ্মী বটগাছ নিরবে এখনো, দ্বারিয়ে আছে। প্রশ্ন মনে একটাই বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হলো, বটগাছকে সংরহ্মন করা হলো না। আমি ভাবনার সাগরে, এখনো আছি। এমনি করে একদিন ২৫/২৬ ডিসেম্বর হবে, আমার খুঁজে চার পাঁচ জন সাংবাদিক বাড়ী এসেছে। তখন তো আর মোবাইলের যোগ নয়। মামার বাড়ীতে টেলিফোন আছে। আমি বাড়ী না থাকাতে, তাদেরকে ফোন নম্বাবার দিয়ে আগামী কাল আসতে বলেলন মা। রাতে বাড়ী আসতেই মা আমাকে বললেন। রাতেই হাবিবুল্লাহ চাচাকে বলে আসলাম, আগামীকাল আমি কাজে আসতে পারবোনা। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মামা, মোহাম্মদ হোসেন সাহেবের বাড়ীতে টেলিফোনের সামনে বসে আছি। মনে মনে ভাবছি, এক হাজার না হউক, অত্যন্ত পাঁচশত টাকা তো দিতেই পারে। অভাবি সংসার ও লোভি মন অনেক কথাই ভাবতে পারে। আমার মনও সে থেকে আলাদা হতে পারলোনা। বার বার সেই বিদেশি সাংবাদিকের কথাই মনে পরছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেহ্মা করার পরেও কোনো ফোন না আসাতে, কিছুটা হতাশ হয়েই ঘরে ফিরতে হলো। মা ভাত দিতেই খেতে বসলাম। তিনটায় ফোন আসলো, ততক্ষণে আমি বটগাছের পাশে পুকুরের পারে গিয়ে বসে আছি।এলাকার অনেকে মানুষ পুকুরে গোসল করে, হাঁড়িপাতিল ও কাপরচুপো ধোয়াপাকর করে।এই পুকুরের বিগতদিনের ইতিহাস আমাকে মর্মাহত করে, এখনো করছে সংরক্ষণের অভাবে। মাকে বলেই গিয়েছিলাম। আমার ছোট ভাই নুর হোসেনকে দিয়ে ডাকতে চেয়েছিলো, সাংবাদিকরা তার সাথেই চলে আসলো। নিরবে বসে থাকতে দেখে, আমাকে না জানিয়েই কিছু ছবি নেওয়া হলো। কেমন আছেন, আপনিই রবিউল আলম। পুকুরের পাশে বাধানো ঘাট,পাশে এসে বসলো। নুর হোসেন চলে গেলো। আপনার দেখা স্বাধীনতার সংগাম কি বলবেন ? কিছুহ্মন চুপ করেই ছিলাম। সাংবাদিক,আরে শুরু থেকে বলুন। আপনি নাকি অনেক ভালো বলতে পারেন, অনেক কিছুই দেখেছেন। শুনেইতো আপনাকে খোজ করে এলাম। আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না। শুরু থেকেই জান্তে চায়। আমি তাকে উল্টো প্রশ্ন করলাম এত সময় হবে তো আপনাদের। বলেন। ২৮ শে ফ্রেরুয়ারী সকাল থেকেই বাঙালী অবাঙালী মাঝে উত্তেজনা চলছে। যেকোনো মুহূর্তে আক্রমন হতে পারে বাঙালী পাড়া কাটাসুরে। ২৭ শে ফেব্রুয়ারী বাসের ভাড়া নিয়ে অবাঙালী কন্টেকটারের সাথে মারামারি হয়েছে। সকাল ১০ টার সময় হামলা শুরু হলো। বাঙালীদেরকে কচুকাটা করতে করতে রহিম বেপাড়ী ঘাট পর্যন্ত এসে পরেছে।একটি ঠেলা গাড়ীর উপরে একি পরিবারের তিনজন মা ও দুই ছেলেকে কেটে গাড়ীতে উঠিয়ে দিয়েছে। বড় ছেলের ঘাড়ের কোপটা মাথাটা গলার সাথে আটকে আছে, ছোট ছেলেকে ঘাড়ের নিচের অংশ হাতের উপর থেকে কমর পর্যন্ত নামিয়ে দিয়েছে, মাকে পেটের আংশটায় ক্রস করে ফাড়া হয়েছে।এই দৃশ্য দেখে বাঙালীরা যে যেদিকে পারছে জীবন নিয়ে পালাচ্ছিল। মুহুর্তে খবর রটে যায় টেনারীমোর, হাজারীবাগ, জিগাতলা, মনেশ্বর, টালির অফিস, রায়ের বাজার।প্রতিরোধ করতেও সময় নিলো না। যার যা আছে তাই নিয়ে দলে দলে বাঙালীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললো রহিম বেপাড়ী ঘাটে। মনা জমিদার, খুরশেদ আলম, হাসেম খান, নাসিরউল্লাহ, ইউনুস খান, বর্তমান এমপি আলহাজ্ব মোঃ সাদেক খানের বাবা মেকাব খানেদের বাড়ীর বন্দুক। বাশের লাঠি, গজারী, গড়ান। যে যা হাতের কাছে পেয়েছে। তাই নিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হলো। করিম সাব, জহুল আলী, কদম আলী, তোফায়েল খান রশিদ চাচা সহ সর্বস্তের জনতা। চলবে ২১ পর্ব নিয়ে।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামলী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।