জনাব রবিউল আলমঃ ২০ শে ডিসেম্বর ঘুম থেকে উঠেই রায়ের বাজারে হাজির, দাদা টাকা পেয়ে দোকানে অনেক মাল উঠিয়েছে। আলু পিয়াজ রসুন আধা সহ তরিতরকারির বাহারি দোকান। বর্তমান সুখেন খানের দোকানের অপরপ্রান্তে,দেখতে ভালোই গালছিলো। বারটা মনে নেই। শনিবার, মঙ্গলবার রায়ের বাজারে হাট মিলতো। আঁকড়া মন্দির থেকে মাধুরী স্টোর পর্যন্ত। মাছ ও মাংসের স্থান পরিবর্তন হতো না। দাদার দোকান কিছুটা গুছিয়ে দিয়ে মাংসের দোকানের সামনে গেলাম, দীর্ঘদিনের কর্মস্থান। আমার মহাজন হাবিবুল্লাহ চাচা পালপাড়া থেকে একটা গরু এনে নিজেই জবাই করে বিপদে পড়েছে, দোকানে কোনো কর্মচারী না আসাতে। এমনিতেই চাচা সুস্থ থাকেন না, তার উপর নিজে কাজ করতে পারেন না। তাকে দেখেই আমার খুব কষ্ট হলো। আমি তার হাত থেকে চাকুটা নিয়ে সব কাজ সমাধান করে মাংস বিক্রি শুরু করলাম, এক টাকা শের। দীর্ঘদিনে বন্দী জীবন থেকে জাতির মুক্তি ও মাংস,এ যেনো এক হুলুস্থুল কাণ্ড। আমার মাংস কাটতে যতটা সময় লেগেছে, শেষ হতে সময় লাগে নাই। চাচা আমাকে পাচটা টাকা ও কিছু মাথার মাংস দিলেন। যুদ্ধ চলাকালিন সময় আমার বেতন ছিলো এক টাকা রোজ,কিছু উপরি পাওয়া হতো। পাঁচ টাকা ও মাংস পেয়ে খুসীতে আত্মহারা। শুরু হলো নতুন করে বাচার স্বপ্ন পুরনের জীবন যুদ্ধ। বাড়ী গিয়ে গোসল, খাওয়া দাওয়ার পর একটু ঘুমিয়ে ছিলাম। চারটার দিকে বাদশা মিয়ার ছেলে আক্তার ও রসুল এসে ডেকে উঠালো। বুদ্ধিজীবী নিয়ে গেলো। অনেক লোকের সমাগম, আমি কিছুতেই মন বসাতে পারছিনা। এখনো লাশের গন্ধ ভেসে আসছে বাতাশে। নতুন নতুন লাশ দেখা যাচ্ছে ফুলে উঠছে। পুরনো লাশের কংকাল গুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। হাত পা মাথার খুলির অভাব নাই। মাটির নিচে চাপা দেওয়া লাশগুলো সব উঠিয়ে অথবা উঠাতে পেরে বলে মনে হয় না। তবে লাশ ফুলে মাটির উচ্চতা যতটুকু উচু হয়েছিলো। লাশের পেট ফেটে যাওয়ার পর, তার চেয়েও নিচু হয়ে গেছে। এখন আর বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না দর্শনার্থী ও সাংবাদিকদেরকে এগুলো মানুষকে পুতে রাখার গর্থ। বাচ্চারা স্বজন হারা পরিচয় বিহীন, ঠিকানা না পাওয়া বুদ্ধিজীবীদের মাথা হাড় কুড়িয়ে সাংবাদিকদেরকে দিচ্ছে ছবি তোলার জন্য। ভিডিও, স্টিল ছবি তোলা হচ্ছে। কত মানুষের সাহ্মাৎকার নিচ্ছে বুদ্ধিজীবী হত্যার করুন কাহিনী বলছে। আমি তাদেরকে কখনো দেখি নাই। আমাদের এলাকায়তো দুরে কথা, তারা ঢাকাও থাকে না। কাল্পনিক কল্প কাহিনী বলেই চলেছেন। নিজেকে আর সামলাতে পারছি না। আমি সাংবাদিক কে বললাম। এই লোক তো মিথ্যে কথা বলছেন। আপনি আমাকে জিগ্যেস করুন, আমি নিজের চোখে দেখেছি বুদ্ধিজীবীদের কে হত্যা করতে। আমি এই হত্যার স্থানটা প্রথম দেখি ৮/অথবা ৯ ডিসেম্বর, রাজাকাররা অনেক লাশের সাথে আমাকে ফেলে রেখে গিয়ে ছিলো। ১১ ডিসেম্বর আমাকে মাছ ধরার সময় ধরে নিয়ে এসেছিলো। সাংবাদিক আমাকে পাত্তাই দিলো না,কি মনে করে, কে জানে। শরিলের আকৃতি ও কথার ওজন মিলাতে পারেনি হয়তো। আমার বয়স, শরিল ও চেহারা মিল তখনো ছিলনা, এখনো নাই। ৭০ নির্বাচনী মিছিলে সুলতানগঞ্জ ইউনিয়ন আঃলীগের সভাপতি নাসিউল্লাহ সাহেব আমাকে নৌকার মাঝী বানিয়ে ছিলেন, তুলা দিয়ে দাড়ি মুছস হাতে হুক্কা। বাজনার তালে তালে চলছে ঠেলা গাড়ীর উপরে নৌকা। রায়ের বাজার রশিদ চাচার বাড়ীর সামনে থেকে মিছিল শুরু হলো। মিছিলের আগে গফুর ভাই, খুরশেদ আলম, বাচ্চু ভাই, নাদের খান, নাসিউল্লাহ, রমিজ ভাই সহ অনেকেই ছিলেন। রায়ের বাজার হাইস্কুল, টেনারী মোর, জিগাতলা, সায়েন্স ল্যারেটারী হয়ে কলাবাগন শুক্রবাদ দিয়ে ৩২ নম্বার রোড। মিছিলের বিশালতা বর্ননা করার স্বাদ্ধ আমার নাই। টেনারী মোর থেকে হাজার হাজার মানুষ মুনসুর কোম্পানির নেতৃত্বে, জিগাতলা থেকে বুলবুল ভাই এর নেতৃত্বে, রাস্তা রাস্তা দ্বারিয়ে থাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পরেছে মিছিকে আকৃতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান পাইব হাতে, তার বাড়ীর বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। মিছিল বর্তমান ৮ নম্বর ব্রিজ দিকে চলে যাচ্ছে।আমার নৌকার ঠেলা গাড়ীটা বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির অপরপপ্রান্তে দ্বার করানো হলো। বাজনার তালে তালে, জয় বাংলা ও নৌকার শ্লোগানে আমি পাগলের মত হয়ে গেলাম। মজিব বাইয়া যাওরে, আমার ভাঙ্গা নাও গানের সুরের সাথে শরিলের নানা অঙ্গভঙ্গি দেখে, একপলকেই আমার দিকে চেয়ে আছে নেতা। চলবে ২০ পর্ব নিয়ে আসবো।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামলী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।