জনাব রবিউল আলমঃ আমি বাড়ী যাওয়ার পরে খাওয়ার দুম দেখেই কিছুটা বিব্রত হলাম, মায়ের কাছ থেকে একটা গামছা নিয়ে নদীতে গোসল করে আসলাম। সবারই খাওয়া হয়ে গেছে। মা আমার জন্য ভাত বেরে বসে আছে। অনেকদিন পরে মা ও আমি পেট ভরে ভাত খেলাম। মায়ের সাথে অনেক কথা শেয়ার করলাম। মা জান্তে চাইলো, তোমার অনেক কষ্ট হইতাছে। ওরা এক হাজার টাকা দিছে বইলাই সংসারটা চলতাছে। তোমার বাবাতো ১০ টাকারও কাজ করতে পারেনা। দাদার দোকানে কোনো মাল ঠাল নাই। কালকে তোমার দাদাকে দুইশ টাকা দিতে চাই, তুমি কি বলো। গতকাল তিনশ টাকার বাজার সদাই করেছি। পাঁচশ টাকা আমার কাছে রাখবো। তোমার প্রয়োজন হলে নিবা। মায়ের কথা শুনতে শুনতে কখন যে নিজের অজান্তে চোখ বেয়ে পানি পড়ছিলো, বুঝতেই পারিনি। গালের কাছে চোখের পানি আসাতেই টের পেলাম। যুদ্ধ কতটা ভয়ানক, কতটা খুধা ও যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়, কত আপনজন হারাতে হয়, কত রক্তের চাহিদা পুরন করতে হয়েছে জাতিকে, হিসাব কে রাখবে। গতকাল আর আজ আমার ঘরের ব্যবদান দেখেই বাংলাদেশের হিসাব করা যাবে। একটি টাকা ও একমুঠো চাল আমাদের ঘরে ছিলো না। সাড়াদিন কাজ করলে ৪/৫/১০ টাকার উপরে উপারজন করা সম্ববও না। বিদেশি সাংবাদিকের এক হাজার টাকা, আমি কল্পনাও করতে পারছিনা। মনে মনে ভাবছি, একেই বলে ভাগ্য। সবাই ঘুমিয়ে পরেছে, বাড়ীটা নিরব। মনের মাঝে কত কথা উকিমারছে,আস্তে আস্তে, কাছে গিয়ে মায়ের গলাটা ধরতেই কান্না থামাতে পারছিলামনা, জোরে আওয়াজের ভয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে অনেকহ্মন কাঁদলাম। মা আমার গলাটা একটুও সরাতে বললেন না। মাও কাঁদছে। এমন করে মায়ের বুকের শান্তি আর কখনো অনুভব করা হয় নাই। এই পৃথিবীর সকল শান্তি আমার মাঝে হাজির হলো। অনেক রাত অবধি মায়ের গলা ধরেই আছি। মা আজ আমাকে বুকে নিয়েই ঘুমালেন। সকালে মা উঠে গেছে নাস্তার ও নামাজ পড়ার জন্য। বিদেশিরাও হাজির হয়েছে। আমার ঘুম কিছুতেই ভাংছে না। অনেক চেষ্টার পর, মা এক প্রকার জোর করেই ঘুম ভাংগালো। উঠেই জামা গায় দিয়েই চলেন। দোভাষী, আরে আরে নাস্তা করে নাও।নাস্তা করে বধ্যভুমিতে চলে গেলাম। আজ আমার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হলেন দর্শনার্থী। একের পর এক স্বজন হারানো, দেখতে আসা সাধারন ও মুক্তিযোদ্ধাদের। আমাকে দায়ীত্ব দেওয়া হলো আশেপাশে যদি কোনো মুক্তিযোদ্ধার ও আপনজন হারানোদের খোজ করা, পারলে তাদেরকে নিয়ে আসা। আমি তাদেরকে বধ্যভুমিতে রেখে প্রথমেই ঋষি পাড়া গেলাম, এই মুহুর্তে নাম মনে নেই একজনকে রাজাকাররা হত্যা করেছিলো। বাড়ীতে কাওকে না পেয়ে, বর্তমান কমিনিটি সেন্টারের অপর পারের বাড়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিহ্মকে হত্যা করেছিলো, সাই বাড়ীতে গিয়ে বেগম সাব কে বললাম। আমার সাথে গেলে আপনার সাহ্মাৎকার নেওয়া হবে। প্রকৃত ভাবে আমার মত পাগল আর কি আছে। বেগম সাহেব আমার কথা শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পরলো। তুমি কি আমার সাহেব কে এনে দিতে পারবে। তুমি যেখানে বলবে, আমি সেখানেই যাবো। ছোট ছোট দুইটি ছেলেকে বুকে জরিয়ে বিলাপ করে কান্না শুরু করেছে। চুলায় ভাত রান্না করছিল। আমি মহাবিপদে পরেছি। না ফেলে আসতে পারছি, না দ্বারিয়ে থাকতে পারছি। বাড়ীর শেষ প্রান্তে একটি দোচালা টিনের ঘর হওয়াতে রাস্তা থেকে আওয়াজ শুনা যাচ্ছে না। আপনজন হারানোর ব্যথা আমিও অনুভব করতে পারছিনা। মানুষ এত কান্তে পারে, বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি দ্বারিয়েই আছি বলদের মত। কেনো যে আসলাম এই বাড়ীতে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আর কারো বাড়ীতে যাবো না। অনেকহ্মন পরে কান্না থামায় আমি আস্তে আস্তে বাড়ী থেকে বের হলাম। বধ্যভুমিতে গিয়ে দেখি সাহ্মাৎকার চলছে। মানুষের অনেক বির। জান্তে পারলাম দুই তিনজন মুক্তিযোদ্ধার সাহ্মাৎকার হয়ে গেছে। একজন সন্তান হারা পিতার ও সাহ্মাৎকার নেওয়া হয়েছে। চলবে ১৮ পর্ব নিয়ে আসবো।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামলী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।