March 20, 2025, 8:13 am
শিরোনামঃ
ঢাকাস্থ রাজবাড়ী জেলা সাংবাদিক সমিতির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত আদাবর থানার ১০০ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র উদ্যোগে দোয়া মাহফিল ও ইফতার বিতরণ রাজধানী মোহাম্মদপুরে রোজাদারদের মাঝে ছাত্রদলের ইফতার বিতরণ তৃতীয় বারের মতো ডিএমপির শ্রেষ্ঠ পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ হাফিজুর রহমান আদাবর থানা যুবদলের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল ও ইফতার বিতরণ রাজধানী মিরপুরে যুবদল নেতা সাজ্জাদুল মিরাজের শাড়ী ও লুঙ্গি বিতরণ চন্দ্রিমা হাউজিং ইউনিট বিএনপি’র উদ্যোগে দোয়া মাহফিল ও ইফতার বিতরণ বাউফল মোবাইল শপে চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানববন্ধন যুবদল পরিচয়ে কেউ দখল-বাণিজ্য করলে আটক করুন কালুখালীতে বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানায় উপজেলা প্রশাসনের খেজুর বিতরণ

অগ্নিঝড়া মার্চের ২৫ শের কালো রাতঃ রবিউল আলম

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় : Friday, March 25, 2022
  • 231 Time View
সারাদিনের শ্রমে ক্লান্ত শরিল নিয়ে বিছানায়, ঘুমের মাঝে অচেতন ছিলাম। সকালে ঘুম ভাঙায় কর্মস্থল ইটের খোলার ইটা টানার কাজে, মেকাব খানের খোলায়। কেউ কোথাও নেই। নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছিলো। একটু দুরে বর্তমান প্রেমতলা, তৎকালীন চিতার পাড়ে বসে আছি। কিছু সময় পর, একে একে মেকাব খান, মিয়াচান খান, হাসেম খান, রশিদ চাচা, আওয়ামীলীগ নেতা নাসিরুল্লাহ সহ অনেকেই চিতার পাড়ে এসে বসলো। গালগল্প চলছে। হটাৎ একটি মটার সেল এসে সামনেই পরলো। সবাই এদিক ওদিক আত্নরক্ষার্তে। ভাগ্য সহায়তার জন্য কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হন নাই। আমি কিছুটা দুরে মলত্যাগ করে পানি নিতে পুস্কুনির পাড়ে। একটি বোয়াল মাছ চিত হয়ে ভেসে আছে। পানি খরচ করে মাছটি টেনে উপরে উঠালাম। খোলার দারোয়ান আমাকে আটক করে মেকাব খানের কাছে নিয়ে গেলো, মাছ চুরির অপবাদ দিয়ে। আগের দিন পুকুরে জেলেরা মাছ দরে ছিলো, আজও ধরার কথা ছিলো। দেশে কিছু একটা হয়েছে। সবাই স্তব্দ হয়েই ছিলো। মাছ নিয়ে দারোয়ানের অতিউৎসাহী হওয়াতে, পচণ্ড একটা দমক, মেকাব খান বলেই চলেছে, হালার পুত মাছ খাইবো কে ? দেশটাই পাকিস্তানীরা শেষ কইড়া দিছে। কে বাচে কে মরে তার নাই ঠিক ঠিকানা। আমাকে মাছ নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া সাথে সাথে আর একটা মটর সেল এসে আঘাত করলো চিতার পারে। এবার আমি কিছুটা ভয় পেয়েছি। আতংকিত হয়েই খালের পাড় দরে, আস্তে আস্তে বাড়ীতে। মা সাথে সাথে আমাকে জরিয়ে দরে কান্নায় ভেঙে পরলেন। দাদা কিছুতেই থামাতে পারছেন না। সেনাবাহিনীর একটি গাড়ী বাড়ীর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মা একেবারে চুপ হয়ে গেলেন, নিজের মুখ নিজেই চেপে ধরলেন। এবার আমিও নিশ্চুপ হয়ে পরলাম। আস্তে আস্তে দাদার কাছে গিয়ে, আস্তে করেই জিগ্যেস করলাম। দাদা কি হয়েছে ? দাদা আস্তে করেই বললেন, পাকিস্তান সরকার বাঙালি গো হত্যা করছে, রাস্তায় বের হলেই গুলি করছে। অনেক মানুষকে মেরে ফেলেছে। ইপিআর পিলখানা,রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগুনতি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। রেডিওর খবরে কইছে। দেশে না-কি যুদ্ধ ঘোষণা করছে। শেখ সাহেবকে ধরে নিয়ে গেছে। এখন আর বাঙালিগো কথা বলার লেইগা কেউ নাই। আওয়ামীলীগের নেতারাও পালাইয়া আছে। আমি কি বুঝলাম, বলতে পারবোনা। তবে ভয়ে একটি কথাও বলতে পারলাম না। রাস্তা থেকে গুলির চিক্কারের শব্দ আসছে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গাড়ীর আওয়াজ ও আসছে। পেটের খুধায় একাকার হয়ে পরেছি। দাদায় আমাকে ধরে আছে। আমি যেনো কিছুতেই পালাতে না পারি। মা কখন কীভাবে বোয়ার মাছ আর ভাত রান্না করেছে। কথায় কথায় সময় পার, একটুও খেয়াল করিনি। সবাই মিলেই খাওয়া হলো। দাদা একটু ঘুমিয়ে পরাতে, আমি সামপালের বাড়ীর উপর দিয়ে রাস্তায় উকি দিয়ে আছি। এক রাশি গাড়ী সারিবদ্ধ নিঃশব্দে আমার সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। কাউকে ধরছে না, কারো বাড়ীর সামনে দারাচ্ছে না। রাস্তায় দেখামাত্র গুলি। জীবননাশের পরে একটু ফিরেও তাকাচ্ছে না। বাংলাদেশের পতাকা তখনো অনেক বাড়ীর ছাঁদে উরছে। অনেকেই বাড়ী ফেলে আত্মগোপনে। পতাকা নামাতে ভুলে গেছে। না-হয় ইচ্ছে করেই পতাকা নামানো হয় নাই। সেনাবাহিনীর গুলির টার্গেট ছিলো বাঙালি স্বাধীন পতাকা। অজশ্র গুলি করা হলেও একজন সেনাবাহিনী ও গাড়ী থেকে নামার প্রয়োজন অনুভব করেন নাই। তখন বুঝতে না পারলেও এখন অনুভব করছি, ওরাও ভয়ে ছিলো। ২৫ মার্চ ১৯৭১ এর কালো রাত ছিলো প্রকৃত ভাবেই অন্ধকার। অনেক সেনাবাহিনীর গাড়ীর বাতিও জ্বলেনি। আমাদের বাড়ীর পাশের বাড়ীতে একটি রেডিও ছিলো। পাশে ছিলো কলার বাগান। রেডিও নিয়ে সবাই মিলে বিবিসির বাংলা সংবাদ শুন ছিলাম। আদমজি, ইপিআর, বিশ্ববিদ্যালয়, সায়েন্সে ল্যারেটারী, মতিঝিল, গুলিস্তান, অভিযাত স্থানে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ চলেছে। মিরপুর, মোহাম্মদপুরে বিহারীদের তাণ্ডবলীলা চলেছে। টিক্কাপাড়া, জহুরী মহল্লা, আজিজ মহল্লায় চলেছে বাঙালি নিধনের রঙ্গলীলা। অনেক কষ্টে আমার এক ভগ্নিপতি গনি ও তার স্ত্রী সহ জীবীত অবস্থায় আসতে সক্ষম হয়েছে। দাদা ভাত খাওয়ার পরে কিছুটা জিমুছিলো, ঘুমের ভান করাতেই আমি প্রতক্ষ করার কাজে বের হয়ে গেলাম। অনেক বাড়ীর উপর দিয়ে রায়ের বাজার বাজারের ছাদে, হাজারীবাগ দিয়ে ইপিআরের সদস্যরা বছিলার দিকে পালিয়ে যাচ্ছে। শত শত মানুষ তাদেরকে সহায়তা করছে। কিছুটা কৌতহলি হয়েই বর্তমান সিকদার মেডিকেল কলেজ, তৎকালীন তাজু কোম্পানিদের ইটের খোলার পাশে গিয়ে দাড়ালাম। কারো হাত নাই, কারো পায়ে ও গায়ে গুলির আঘাত। কেউ কাপর দিয়ে বেধে দিচ্ছে, কেউ কিছু খাবার ও পানি নিয়ে সহায়তা করছে। কিছু ডাক্তার স্বাদমতো চেষ্টা করছে রক্ত থামানো। তখনো পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিম্নাঞ্চলের সন্ধান পান নাই। আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলাম না, কিছুটা ভয় ও ছিলো।বাড়ীতে মায়ের কথা ও মাইরের কথা মনে হওয়াতে বড় খালের পাড় হয়ে বাড়ী ফিরলাম। আজও মায়ের বকা ও মাইর থেকে বাচতে পারলাম না। ২৬ মার্চ ভোর থেকেই জনমানব শুন্য ঢাকা। কোনো বাড়ীর ছাঁদে আর স্বাধীন বাংলার পতাকা দেখা যাচ্ছে না। কোনো বাড়ী থেকে সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। কেমন একটা ভুতুড়ি নগরীতে পরিনত হয়েছে ঢাকার শহর। ইতিমধ্যে পাশের ঘরের রেডিওটার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। কিছুটা কাছে গিয়ে শুনতে হলো,সাউন কমিয়ে দেওয়ার কারনে। ঢাকা একমৃত নগরীতে পরিনত হয়েছে, সংবাদ মাধ্যমের সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য পাকিস্তান বাহিনী বাধা সৃষ্টি করেছে। রাস্তার পাশে লাশ পরে আছে, উদ্ধার করার,কাফন দাফনের কোনো ব্যবস্থা নাই। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ইপিয়ারের জোয়ানরা কিছুটা প্রতিরোধ করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ পুরো ঢাকা এখন পাকিস্তানীদের নিয়ন্ত্রণে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার বাঙালি ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে। আমরা কোথায় যাবো ? চিন্তিত মনে দাদার কাছে এসে প্রশ্ন করলাম। দাদা কোনো উত্তর না দিয়ে, চুপ করেই ভাবতে ছিলো। বাবা মা, ভাই সহ ১৮ জন মানুষ। কোথায় যাবো। কে খাওয়াবে ? কোথায় আশ্রয় নিবো ? একাধিক প্রশ্নের সমাধান না হওয়াতে। মামা হোসেন সাহেব সরকারের দায়িত্বশীল পদে চাকরীর সুবাধে আমাদেরকে অভয় দিলেন। মরলে একসাথে, বাচলেও একসাথে। ঢাকা ছেড়ে আর যাওয়া হলো না। স্বাধীনতার নয় মাস নিয়ে লেখা, আমার দেখা রায়ের বাজার বদ্ধভুমি এবং শহিদ বুদ্ধিজীবীদের রক্তে ভেজা একটি বটগাছ বই এর মাধ্যমে বলেছি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। বাঙালির হারানো ঐতিহ্য। জাতির জনক, বঙ্গমাতার মানব প্রেমের গল্প। মুক্তির সংগ্রামের একসাগর রক্তের বিনিময়ে, অনেকের প্রশ্ন থাকতেই পারে রাজনৈতিক বিতর্কের জন্য। প্রমান করতে হলে তিরিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করতে হবে। দুই লক্ষ চুয়াত্তর হাজার মা-বোনের সম্ভমহানীর প্রয়োজন আছে কি ? এই বাংলার মাটিতে রাজনীতি করবেন। বাঙালির শাসনভার গ্রহন করবেন। বাঙালির রক্তের সম্মানহানী করবেন ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে। ইতিহাস আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না। ২৫ মার্চের কালোরাত যারা দেখেন নাই, তাঁদেরকে কালোরাত সম্পর্কে হাজারো লেখার মাধ্যমে বুজানো যাবে না। তবু আমরা লেখবো, এদেহে যতদিন প্রান আছে।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।
শেয়ার করুন
More News Of This Category
ডিজাইনঃ নাগরিক আইটি ডটকম
themesba-lates1749691102